রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০৮:১২ পিএম

অমর প্রতিভাময় শিল্পী হ্যাপি আকন্দ

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০৮:১২ পিএম

হ্যাপি আকন্দ। ছবি - সংগৃহীত

হ্যাপি আকন্দ। ছবি - সংগৃহীত

১২ অক্টোবর। এই তারিখটি বাংলাদেশের সংগীতভক্তদের হৃদয়ে এক গভীর আবেগের নাম। এই দিনে জন্মেছিলেন হ্যাপি আখান্দ, আমাদের সংগীতাঙ্গনের এক ক্ষণজন্মা নক্ষত্র। আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তবে ৬৫-তে পা রাখতেন এই মেধাবী শিল্পী। মাত্র ২৭ বছরের ক্ষণকালীন জীবনসীমায় তিনি যে আলো ছড়িয়ে গেছেন, তা আজও অজস্র শিল্পী ও ভক্তের মনের বাতিঘর হয়ে জ্বলছে। জন্মেছিলেন ১৯৬০ সালে আজকের দিনে, পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে। পারিবারিক নাম ছিল জিয়া হাসান আখান্দ, সংগীতজগৎ তাকে চিরকাল মনে রেখেছে শুধুই ‘হ্যাপি’ নামে।

হ্যাপির সংগীতজীবনের শুরু হয়েছিল খুব অল্প বয়সেই। বড় ভাই লাকী আখান্দ ছিলেন তার সংগীত জীবনের প্রথম দিকদর্শক। মাত্র আট বছর বয়সেই গানে হাতেখড়ি হয় হ্যাপির। তার শৈশব, কৈশোর এবং তারুণ্য- সবটাই কাটে গান আর বাদ্যযন্ত্র ঘিরে। গিটার, তবলা, পিয়ানো, ড্রামস- কোন বাদ্যযন্ত্রটি তার হাতে প্রাণ পায়নি? তার মিউজিক সেন্স এতটাই প্রখর ছিল যে যেকোনো জটিল সুর-নোট সহজেই বুঝে নিতে পারতেন, গানে ঢুকে যেতেন পুরো মন-প্রাণ দিয়ে।

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে হ্যাপি আখান্দের কণ্ঠে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি বাংলাদেশের সংগীতজগতে এক অনন্য যুগের সূচনা করে। লাকী আখান্দের সুর ও এস এম হেদায়েতের লেখা এই গানটি আজও দেশের আনাচে-কানাচে- স্কুলের অনুষ্ঠানে, বিয়ের গায়েহলুদে, বনভোজনে, কিংবা রাতে নিঃসঙ্গ কারও প্লেলিস্টে- শোনা যায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলমান এই গান যেন হ্যাপির অমরত্বের সাক্ষ্য হয়ে আছে।

হ্যাপি ছিলেন কেবল একজন কণ্ঠশিল্পী নন, বরং একজন সংগীতস্রষ্টা। ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, ‘আমি আবার আসব ফিরে’, ‘সবাই যখন ঘুমে’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’- এসব গান তার কণ্ঠ ও সংগীতায়োজনে এক অপার আবেগ নিয়ে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তার সৃষ্টিতে ছিল সহজ-সরল সৌন্দর্য, স্বতঃস্ফূর্ততা ও গভীর মানবিকতা। শুধু দেশেই নয়, বিদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী যেমন মান্না দে ও রাহুল দেব বর্মণও হ্যাপির কণ্ঠের প্রশংসা করেছিলেন, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

হ্যাপি আখান্দ ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া ‘স্পন্দন’ ও ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’-এর মতো ব্যান্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তার তৈরি ‘হ্যাপি টাচ’ ব্যান্ড ছিল ভাই লাকীর সঙ্গে সঙ্গীতযাত্রার প্রারম্ভিক অধ্যায়। হ্যাপির হাত ধরে যে ব্যান্ড সংগীতের শক্ত ভিত তৈরি হয়েছিল, তা পরবর্তী প্রজন্মের ব্যান্ড তারকাদের পথ দেখিয়েছে। তার বোহেমিয়ান জীবনধারা, অনানুষ্ঠানিক সংগীতশিক্ষা এবং নতুন সুর তৈরির আগ্রহ তাকে করে তুলেছিল ব্যতিক্রমধর্মী এক সংগীতশিল্পী।

১৯৮৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর, মাত্র ২৭ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন হ্যাপি আখান্দ। তার এই অকাল প্রয়াণ দেশের সংগীতজগতের জন্য ছিল এক বড় ধাক্কা। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম বড় ট্র্যাজেডি। তার চলে যাওয়াটা কেবল এক শিল্পীর মৃত্যু নয়, বরং এক সম্ভাবনার শেষ হয়ে যাওয়া। হ্যাপি আখান্দও ঢুকে গেছেন ‘ক্লাব ২৭’-এর অলিখিত তালিকায়- যেখানে আছে জিমি হেনড্রিক্স, কার্ট কোবেইন, জ্যানিস জপলিনদের মতো দুনিয়া কাঁপানো প্রতিভারা।

তার চলে যাওয়ার পর বড় ভাই লাকী আখান্দ নিজ হাতে তৈরি করেছিলেন হ্যাপির একমাত্র একক অ্যালবাম- ‘শেষ উপহার’। প্রচ্ছদে লেখা ছিল, ‘বন্ধুরা আমার গান গেয়ো, আমাকে বাঁচিয়ে রেখো।’ হ্যাপি নিজেই যেন বলে গেছেন, তার গানই হোক তার চিরকালীন অস্তিত্বের মাধ্যম। সেই গান আজও বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে।

Link copied!