মারধর ও এসিড নিক্ষেপের পর এবার হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও তার সহযোগী মো. ফয়সাল আল নোমানের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমানের আদালতে রাশিদা আক্তারের স্বামী আব্দুল মজিদ মামলাটি করেন।
এরপর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন।
এর আগে রাজধানীর গাবতলীতে এক নারীকে মারধর ও এসিড নিক্ষেপের অভিযোগে ডিপজলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। পরে ওই মামলা প্রত্যাহারের জন্য সেই নারীর স্বামীকে মেরে বস্তাবন্দি করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আগের মামলা করার পর ডিপজল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। ভয়ে রাশিদা আক্তার দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ি চলে আসে। গত ৪ সেপ্টেম্বর তারা বাসা থেকে কাজে গেলে তাদের মেয়ে বাসায় একা ছিল। তখন ডিপজলের সন্ত্রাসী বাহিনীর ১০-১২ জন বাসায় প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় এবং ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। মেয়েকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেন। এতে ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা হয়।
এ ছাড়া আব্দুল মজিদ গত ১ নভেম্বর যাত্রাবাড়ি থানার পেছনে হোটেলে খাবার খাওয়ার জন্য গেলে দু’জন তাকে কথা আছে বলে ডেকে নেয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তাকে শনির আখড়ায় একটি বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় নেয়। সেখানে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। ডিপজলের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আব্দুল মজিদকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
এ ছাড়াও অভিযোগে বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে ডিপজলের সহযোগী মো. ফয়সাল তাকে রড দিয়ে মারধর করে। অন্যরাও মারধর করতে থাকে। ফলে মারাত্মক আহত হন তিনি। ডিপজল আব্দুল মজিদের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করতে যায়। পরে ডিপজলের পা ধরে জীবন ভিক্ষা চায় আব্দুল মজিদ এবং মামলা তুলে নেবে বলে জানায়।
এ সময় আব্দুল মজিদের কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা এবং বিকাশে থাকা সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তারা। আর দুই দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে তাকে আহত অবস্থায় ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে রাশিদা আক্তার তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। গত ৩ নভেম্বর মামলা করার জন্য যাত্রাবাড়ি থানায় যান তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মামলা নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রশ্ন রেখে ডিপজলের ম্যানেজার জাহিদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বসের বিরদ্ধে তারা যে অভিযোগ এনেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যে মানুষটি দু-হাত ভরে সারা বছর মানুষকে দেয় সে ২৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিবে? এটাও বিশ্বাস করতে হবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা। তা ছাড়া যে লোকটা দেশেই নেই সে কি করে মারতে যাবে?’
ডিপজলের সহযোগী মো. ফয়সাল বলেন, ‘আমি ওই মহিলাকে চিনি না। তা ছাড়া যে অভিযোগ আনা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সবাই মগের মুল্লুক পেয়েছে, মন চেয়েছে একটা মামলা দিয়েছে। ডিপজল স্যারের পেছনে শত্রু লেগেছে, তারা এসব করছে। আমাদের আইনের প্রতি পুর্ণাঙ্গ আস্থা। আশা করি, তারা সঠিক তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
জানা গেছে, পটপরিবর্তনের পর থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন অভিনেতা ডিপজল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিএফডিসিতে দেখা যায়নি তাকে। নেই সমিতির কারো সঙ্গে যোগাযোগ। এই অভিনেতার নামে কয়েকটি মামলা হওয়ার কারণে সহসাই দেশে ফিরছেন না।

