কিছুতেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ছোট পর্দার অভিনেত্রী তানজিন তিশার। প্রথম সিনেমায় নাম লেখিয়ে একের পর এক বির্তকে এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি ‘এ্যাপোনিয়া’ নামের এক অনলাইন ফ্যাশন পেজের পক্ষ থেকে প্রতারণার দায়ে প্রথমে আইনি নোটিশ এবং পরবর্তীতে গত ৫ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৮ নম্বর কোর্টে ৪২০/৪০৬ ধারায় প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন অ্যাপোনিয়ার এক্সিকিউটিভ মো. আমিনুল ইসলাম। সি আর মামলা নম্বর ৯৬২/২০২৫। মামলায় দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে আসামির প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ চাওয়া হলে ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালত তিশার বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকেই শোবিজ অঙ্গনে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছেন তিশা।
এই বিতর্ক যখন তুঙ্গে এমন সময় আরেক নারী উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার তানজিন তিশার কাছে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বলে জানালেন। শুধু তাই নয়, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় বুধবার (১২ নভেম্বর) তিশার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই নারী উদ্যোক্তা। জিডি নং ৯৮৫।
সাধারণ ডায়েরিতে বাদী সায়ানা কুটর ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার আয়েশাহ আনুম ফায়যাহ সানায়া চৌধুরী উল্লেখ করেন, আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। আমার নিজস্ব ফ্যাশন হাউজ রয়েছে, স্টুডিও রয়েছে। দেশের নামি-দামি সকল তারকারা আমার ফ্যাশন হাউজের কাপড় পরিধান করে থাকেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদী বেগম তানজিন নাহার তিশা ২০২৪ সালে ১৩ ডিসেম্বর আমার কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা দামের একটি শাড়ি প্রোগ্রামে পরার জন্য নিয়ে যান। শাড়িটি পরা শেষে পরের দিন ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনি শাড়িটি ফেরত দেননি।
শাড়িটির জন্য ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমি তার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ করি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আমাকে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর শাড়ি ফেরত চাওয়ার কারণে নানা প্রকার অশ্রাব্য ভাষায় গালি- গালাজসহ জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এমনকি ডিক্টেটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)-এর মাধ্যমে হেনস্থা করবেন বলেও হুমকি দেন। আমার মোবাইলে কল রেকর্ডিং প্রমাণ হিসেবে রয়েছে। এন পরও চলতি বছরের ১৩ মার্চ এবং ১৮ মে তার সাথে অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে দেখা হলে বিনয়ের সাথে শাড়িটি ফেরত চাই। কিন্তু তিনি আমাকে শাড়ি ফেরত দেবেন না বলে জানান।
এ ছাড়াও চলতি বছরের নভেম্বরের ৫ তারিখ বিভিন্ন সংবাদপত্রে তানজিন নাহার তিশার বিরুদ্ধে একটি শাড়ি বিষয়ক মামলার কথা জেনে আমি তাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আমার শাড়িটি ফেরত দেওয়ার জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি। ৬ নভেম্বর তারিখে আমার স্টুডিওতে নিয়োগকৃত ফটোগ্রাফার ঝুটন-তাকে ফোন করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে ঝুটুনকে ফোন দিলে ঝুটুন তার কাছে আমার রেফারেন্সে শাড়িটি ফেরত চাইলে, ঝুটুনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার সম্পর্কে নানা রকম খারাপ মন্তব্য করে ফোন রেখে দেন।
পরবর্তীতে ৭ নভেম্বর তারিখে বিবাদী তানজিন নাহার তিশা আমাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ফোন করে মামলার হুমকিসহ আমার মান-সম্মানকে নষ্ট করে আমাকে সমাজে হেয় করে ভাইরাল করার হুমকি প্রদান করেন। এমনকি ১০ নভেম্বর আমাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ করে আমার ব্যবসা নষ্ট করবে, আমার ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট করবে এবং আমার ডিজাইনকৃত কাপড় কেউ পরবে না মর্মে হুমকি প্রদান করে। উক্ত বিষয়ে বর্তমানে আমি ভীষণ নিরাপত্তাহীনতাবোধ করছি।
ইতোমধ্যেই তানজিন তিশা এবং আয়েশাহ আনুম ফায়যাহ সানায়া চৌধুরীর কথোপকথনের কয়েকটি কল রেকর্ড এবং ফেসবুক মেসেজ হাতে এসেছে। একটি রেকর্ডিংয়ে তানজিন তিশা বাদী আয়েশাহ আনুম ফায়যাহ সানায়া চৌধুরীকে বলছেন, ‘তোমাকে নিয়ে আমার ডিবিতে বসতে হবে। আর আমি যদি তোমার পেছনে লাগি তাহলে তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবা না। এখন তো ছুকটাখুকরা লাগছে, আমি যদি তোমার পেছনে লাগি তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবা না।’
আরেকটি অডিওতে শোনা যায়, তিশা এবং ভুক্তভোগী ওই নারী উদ্যোক্তা শাড়ি নিয়ে নানা ধরনের কথা বলছেন। কথা বলার একপর্যায়ে তিশা উত্তেজিত হয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমার ফেমাস হওয়ার ইচ্ছে করলে আমাকে বইলো আমি তোমার ছবি আপলোড দিয়ে দেব সাথে খুব ভালো ক্যাপশন দিয়ে।’
এ বিষয়ে আয়েশাহ আনুম ফায়যাহ সানায়া চৌধুরী বলেন, ‘তানজিন তিশা আমার কাছে আগেও ড্রেস নিয়েছে। কিন্তু সব সময়ই সেগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করার পর ফেরত পেয়েছি। এবার আমার ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি শাড়ি আটকে দিয়েছে। শাড়িটি অনুষ্ঠানে পরে আর আমাকে ফেরত দেননি তিনি। অসংখ্যবার তাকে অনুরোধ করেছি। শাড়ি চাইতে গেলেই প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য ধরনের কথা বলেন আমার সঙ্গে। ঠান্ডা মাথায় আমাকে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে আমাকে ডিবিতে নিয়ে যাবেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। কিন্তু তিশা আমাকে যেভাবে একের পর এক হুমকি দিচ্ছে সেটা নিয়ে আমি খুব শঙ্কিত। তাই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাধ্য হয়ে আমি আইনের দারস্থ হয়েছি। আমার কাছে সকল প্রমাণ আছে।’
এ বিষয়ে জানতে রূপালী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তানজিন তিশার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

