একসময় কান চলচ্চিত্র উৎসব ছিল বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর। নির্মাতা, সমালোচক, চলচ্চিত্রপ্রেমীরা এখানে সমবেত হতেন নতুন সিনেমা, নির্মাণশৈলী ও শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এই উৎসব যেন রূপান্তরিত হয়েছে এক বাণিজ্যিক মেলায়, যেখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে ইনফ্লুয়েন্সারদের উপস্থিতি, ব্র্যান্ড প্রোমোশন এবং লালগালিচার ফ্যাশন শো।
এবারের কানে ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্সার ন্যান্সি ত্যাগী নিজের সেলাই করা গোলাপি গাউন পরে লালগালিচায় হাঁটেন, যা নিয়ে প্রশংসার পাশাপাশি বিতর্কও সৃষ্টি হয়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, সত্যিই কি তিনি নিজে পোশাকটি তৈরি করেছেন? গায়িকা নেহা ভাসিনও এ বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্ককে আরও উসকে দেন।
এ ছাড়া ব্রুট ইন্ডিয়া স্কোয়াডের অংশ হিসেবে আয়ুষ মেহরা, নামিতা থাপার, বিরাজ ঘেলানি, আরজে করিশ্মা, অঙ্কুশ বাহুগুনা, সঞ্জ্যোত কীর, রাজ শামানি, বিষ্ণু কৌশল, শরণ হেগড়ে, আস্থা শাহ প্রমুখ ইনফ্লুয়েন্সাররা কানে উপস্থিত ছিলেন। বলা হচ্ছে, একটি রেড কার্পেট টিকিটের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা, যা স্পনসরদের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সাররা সংগ্রহ করেন।
এই পরিবর্তনের ফলে অনেকেই কানের গ্ল্যামার হারানোর অভিযোগ তুলেছেন। একজন শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলেন, ‘কান এখন এক সার্কাসে পরিণত হয়েছে। চারদিকে শুধু ইনফ্লুয়েন্সারদের ছবি তোলা চলছে। আগে যেখানে হলিউড তারকাদের উপস্থিতি ছিল, এখন সেখানে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিড়।’
জানা যায়, অস্কারজয়ী অভিনেতা কেভিন কস্টনারও নিজের হোটেলের বাইরে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিড়ে আটকে পড়েন । এমনকি বলিউডের বাদশাখ্যাত শাহরুখ খানের উপস্থিতি ছাপিয়েও যেন বড় খবর হয়ে ওঠে মডেল রুচি গুজ্জারের ‘অদ্ভূত’নরেন্দ্র মোদি নেক্লেস।
এই বিতর্কের মধ্যেই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কুশা কপিলা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে আমি কানে গিয়েছিলাম এবং ‘দ্য আইডল’ শোর দুটি এপিসোডের স্ক্রিনিং-এ অংশ নিয়েছিলাম। আমি শুধু লালগালিচায় হাঁটিনি, বরং ভেতরের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্র্যান্ডরা আগে থেকেই সেলিব্রিটিদের স্পন্সর করে লালগালিচায় নিয়ে আসছে। এটা নতুন কিছু নয়। আমাকে ‘র্যান্ডম সেলিব্রিটি’ বলা অনুচিত। আমি একজন ক্রিয়েটর, আমাকে সেই নামেই ডাকুন।’
এ ছাড়াও সারা সারোশ, পারুল গুলাটি, সাক্ষী সিদ্বানী, মাসুন মিনাওয়ালাসহ বহু খ্যাত-অখ্যাত ইনফ্লুয়েন্সার ভিড় জমান কানের লাল গালিচায়।

এসব ঘটনা প্রমাণ করে, কান চলচ্চিত্র উৎসব এখন আর শুধু সিনেমার উৎসব নয়। এটি রূপান্তরিত হয়েছে এক বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মে, যেখানে ইনফ্লুয়েন্সারদের উপস্থিতি, ব্র্যান্ড প্রোমোশন এবং ফ্যাশন শো মুখ্য হয়ে উঠেছে। সিনেমা যেন পেছনের সারিতে চলে গেছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবসহ যেকোনো চলচ্চিত্র সম্মেলনে সিনেমা ও অভিনয়শিল্পীদের অতীত গৌরব ও গ্ল্যামার ফিরিয়ে আনতে সোশ্যাল মিডিয়ার এসব সো-কল্ড সেলেবদের বানর-নাচনের দৌরাত্ম কমানো প্রয়োজন বলেই মনে করেন বেশিরভাগ চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও ভক্ত।