ঢাকা শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

বোমা মেরে থালাপতি বিজয়ের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ০১:৫১ পিএম
অভিনেতা থালাপতি বিজয়। ছবি - সংগৃহীত

জনসভায় মর্মান্তিক পদদলনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আলোচনার কেন্দ্রে দক্ষিণী তারকা ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্র্রি কাজাগাম (টিভিকে)-এর প্রতিষ্ঠাতা সি. জোসেফ বিজয়, যিনি ‘থালাপতি বিজয়’ নামে অধিক পরিচিত। গতকাল বৃহস্পতিবার তার চেন্নাইয়ের নীলাঙ্কারাইয়ের বাড়িতে একটি বোমা হামলার হুমকি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। একটি বেনামী ই-মেইলে জানানো হয়, তার বাংলোয় বিস্ফোরক বসানো হয়েছে এবং বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হবে।

খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী স্কোয়াড, চেন্নাই পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। গোটা বাংলো চত্বর ঘিরে ফেলে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার এই অভিযানে শেষপর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত করে, হুমকিটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। যদিও কোনো বিস্ফোরক মেলেনি, বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়নি প্রশাসন। তদন্ত শুরু করেছে সাইবার অপরাধ দমন শাখা।

উচ্চপদস্থ এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হুমকির উৎস একটি অজ্ঞাত ই-মেইল আইডি, যেটি ভিপিএন (VPN) এবং প্রাইভেসি ব্রাউজারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘প্রায় সব প্রেরক স্তরযুক্ত ভিপিএন ব্যবহার করেন। আমরা যখন ট্র্যাক করি, তখন কেবল জাল IP ঠিকানার নাগাল পাই। অধিকাংশ ভিপিএন সার্ভার যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায়, বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা না পাওয়ায় তদন্ত আরও জটিল হয়ে পড়ে।’

এই ঘটনার পরই বিজয়ের বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে তামিলনাড়ু পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। বিজয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না এলেও, প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে- এ ধরনের হুমকি যতই ‘হো্যাক’ হোক না কেন, প্রত্যেকটি তদন্তের আওতায় আনা হবে।

চেন্নাইয়ে গত কয়েক মাস ধরেই এমন ভুয়া বোমা হামলার হুমকি বেড়েছে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, জনবহুল স্থান ও সেলিব্রেটিদের বাড়িতে এমন বার্তা এসে পৌঁছাচ্ছে নিয়মিত।

রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অনেক সময় একদিনেই একাধিক হুমকি আসে এবং সেগুলিকে একত্র করে একটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রেটিদের লক্ষ্য করে ডিজিপির (DGP) অফিসে ই-মেইলের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

হুমকির তালিকায় শুধু থালাপতি বিজয় নন, আছেন নয়নতারা, তৃষার মতো দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বহু জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীও। এমনকি রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতার বাসভবন, রাজ্য সচিবালয়, বিজেপি সদর দপ্তর, এমনকি মন্দিরও বাদ যাচ্ছে না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বোমা স্কোয়াড দিয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান চালানো হয়, তবে শেষ পর্যন্ত সবই ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিজয়ের রাজনৈতিক যাত্রা শুরুর আগেই বিতর্ক ও ঘটনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগেই তার জনসভায় পদদলনের ঘটনায় প্রাণ হারান ৪১ জন, আহত হন বহু মানুষ। সেই ঘটনার পর বিজয় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছিলেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে; আমি অসহনীয়, ভাষায় বর্ণনা করা যায় না এমন যন্ত্রণা ও শোকে কাতর। কারুরে প্রাণ হারানো আমার প্রিয় ভাই-বোনদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

বিজয়ের রাজনীতিতে প্রবেশকে কেন্দ্র করে রাজ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিরোধী পক্ষও তার রাজনৈতিক প্রস্তুতি ও জনসভায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে সরব। তার মধ্যেই এই বোমাতঙ্ক তাকে আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু তিনি একজন উচ্চপ্রোফাইল সেলিব্রিটি এবং এখন রাজনীতির ময়দানে, তাই ভবিষ্যতেও তাকে ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনকে থাকতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতায়।