ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, ভিয়েতনামের কুয়াং নিন প্রদেশে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হা লং বে। স্বপ্নমূর্তি এই উপসাগরে প্রকৃতি তার সেরা সাজে দাঁড়িয়ে থেকে বয়ে আনে সুরেলা নিস্তব্ধতা। ভিয়েতনামের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই মগ্ন সৌন্দর্যের রাজ্য, এক অসম্ভব শান্তির নাম।
এখানকার নীল জলরাশি, সোনালি সূর্যোদয়, আর পাহাড়ের চূড়া যেন মেঘের সঙ্গে দোল খায়। যেখানে প্রতিটি ঢেউ এক জীবন্ত গাথা, প্রতিটি শিলাকে মনে হয় এক রহস্যময় ইতিহাস। হা লং বে নিয়ে একটি প্রচলিত কথা আছে যে, ‘বহু শতাব্দী আগে, এই অঞ্চলে এক দৈত্য শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে দেবতারা সমুদ্রের মাঝে হাজার হাজার চূড়া তৈরি করেছিলেন। আজ সেই চূড়াগুলো সেসব দেবতার অমর স্মৃতি হয়ে জেগে আছে।’
পর্যটকদের মতে, এখানকার প্রতিটি শিলা কথা বলে, ‘আমরা পাহাড়, আমরা উপকূলের রক্ষক।’ এখানে ভ্রমণ করলে আপনার মনে হতে পারে, সমুদ্রের গাঢ় নীলতা যেন আপনাকে তলিয়ে যেতে ডাকছে। মাঝরাতে, যখন চাঁদের রুপালি আলো জলরাশিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন মনে হয় পুরো বিশ্ব এক সংগীতমালায় সুর করছে।
হা লং বেতে ভ্রমণ এক মন্ত্রমুগ্ধতার মতো, যার প্রতিটি মুহূর্ত আপনাকে ভালোবাসে, প্রশান্তি দেবে। দ্বীপগুলোর আড়ালে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন গুহাগুলো এক ইতিহাসের পৃষ্ঠা, যা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় শতাব্দী ধরে। গুহাগুলোর অন্ধকারে এক অদৃশ্য গল্প পিপাসা, যা একে একে ফুঁটে ওঠে। কিছু দ্বীপ এমনও রয়েছে, যেগুলোর নামের সঙ্গে একটি গল্প জড়িয়ে আছে। যেমন- টাই টপ দ্বীপ, যেখানে যাওয়ার পর মনে হয়, পৃথিবীটা বন্ধ হয়ে গেছে। শীর্ষে উঠলে চারপাশের দৃশ্য এক রূপকথার মতো। অন্যদিকে, সাং সট গুহা, যার ভেতরে প্রবেশ করলেই আপনি অনুভব করবেন, জীবনের সমস্ত ক্লান্তি মুছে যেতে শুরু করেছে। এসব গুহার মাঝে, এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে, যেন এক সময়ের কিংবদন্তি বাস্তবে এসে দাঁড়িয়েছে।
হা লং বে শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি এক বিশাল প্রাণের জায়গা। এখানে মৎস্যজীবীরা তাদের ছোট ছোট নৌকায় চলে, আর তাদের চোখে থাকে এক অদ্ভুত স্বপ্ন। সমুদ্রের মাঝখানে ছোট ছোট মৎস্য গ্রামগুলো যেন এক অসীম স্থিরতার ছবি আঁকে। এই জীবন, এই সারল্য, এই শান্তি সবই যেন চিরকালীন। এখানে গেলে আপনি এক অজানার প্রেমে পড়বেন, যেখানে শুধু জল, হাওয়া এবং শিলা আপনাকে ঘিরে রাখবে। আর তখন বুঝবেন, প্রকৃতির ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না।
যেভাবে যাবেন: হা লং বে যেতে হলে প্রথমে ভিয়েতনামের হাইফং প্রদেশে যেতে হবে। এরপর, হাইফং থেকে বাস, ট্যাক্সি বা মিনিবাসে হা লং বে যেতে পারেন, যা প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় নেয়। এ ছাড়া সরাসরি ক্রুজে যাওয়ারও সুযোগ আছে।