ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

পুষ্টিগুণে ভরপুর মহিষের মাংস

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম
মহিষের মাংস ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও ভারত সহ অনেক দেশে মহিষের মাংস জনপ্রিয় । মহিষের মাংস গরুর মাংসের মতোই দেখতে ও স্বাদে কাছাকাছি হলেও কিছুটা পার্থক্য আছে। গুণগত মানের দিক দিয়ে গরুর দুধ ও মাংসের তুলনায় মহিষের দুধ ও মাংস বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। মহিষের দুধে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

মহিষ কি গরুর জাত?

মহিষ গরুর জাত নয়। তবে দুটিই একই পরিবারভুক্ত প্রাণী —  বোভিড পরিবারে পড়ে। তবে তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির।

মহিষের মাংস কি রেড মিট?

স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংস রেড মিট হিসেবে বিবেচিত। যেমন গরু, খাসি, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি।

মহিষের মাংসের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম)

ক্যালরি: ১৪৩ কিলোক্যালরি।
প্রোটিন:    ২০-২২ গ্রাম।
ফ্যাট:  ৩–৪ গ্রাম।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১.৫ গ্রাম (প্রায়)।
কোলেস্টেরল: ৫৫–৬০ মি.গ্রা.
আয়রন: ২.১ মি.গ্রা. (প্রায়)।
জিঙ্ক: ৪–৫ মি.গ্রা.

মহিষের মাংসের ক্ষেত্রেও গরুর মতো কিছু নির্দিষ্ট অংশ আছে যেগুলো খেতে বেশি সুস্বাদু, নরম বা রান্নার জন্য উপযুক্ত।

মহিষের মাংসের জনপ্রিয় ও ভালো অংশসমূহ

রান (পেছনের উরু): চর্বিহীন, প্রোটিনে ভরপুর, একটু শক্ত।
ব্রিসকেট (বুকের অংশ):    নরম, ফ্যাটি।
চাকি (উরুর উপরের অংশ):    কম ফ্যাট, তুলনামূলক নরম।
রিব (হাঁসির হাড় সংলগ্ন অংশ):সুস্বাদু, ফ্যাটি।
নলি বা হাড়ের: হাড়ের মজ্জা থাকে।
মাথার মাংস (গাল, জিহ্বা): নরম ও জেলাটিনসমৃদ্ধ।
কলিজা (যকৃত): আয়রনে ভরপুর। 

মহিষের দুধ গরুর দুধের তুলনায় অনেকটাই আলাদা, বিশেষত গঠন ও পুষ্টিগুণে।

মহিষের দুধের পুষ্টিগুণ

উচ্চ মাত্রার প্রোটিন- বলা হয়ে থাকে গরুর দুধের চাইতেও বেশি প্রোটিন আছে মহিষের দুধে।

উচ্চ মাত্রার ফ্যাট- মহিষের দুধে আছে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট। যা শরীরে প্রচুর শক্তি জোগায় এবং চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে শোষণে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ- মহিষের দুধে থাকা উচ্চ মাত্রা ইমিউনোগ্লোবিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধেও রাখে কার্যকর ভূমিকা।

ভালো রাখে হৃদযন্ত্র- মহিষের দুধে থাকা পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

নিম্ন মাত্রার কলেস্টেরল- মহিষের দুধে উচ্চমাত্রায় ফ্যাট থাকার পরও এতে আবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কম। ফলে এই দুধকে হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ মনে করা হয়।

ত্বকের যত্নে- মহিষের দুধে থাকা উচ্চ মাত্রার ফ্যাট, ভিটামিন এ ও ই ত্বককে রাখে আর্দ্র। ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখতেও মহিষের দুধের তুলনা নেই।


এন্টিঅক্সিডেন্ট- মহিষের দুধে আছে টকোফেরল এবং রেটিনলের মতো এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর।


মহিষের মাংসের বেশ কিছু পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো। এটি সাধারণত গরুর মাংসের তুলনায় কম চর্বিযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর পছন্দ হতে পারে যদি সঠিকভাবে রান্না করা হয়। 

মহিষের মাংসের উপকারিতা

উচ্চ প্রোটিন: মহিষের মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি, যা পেশী গঠনে সহায়ক। এটি বিশেষ করে যারা শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান বা বডি বিল্ডিং করছেন, তাদের জন্য আদর্শ।

কম চর্বি: গরুর মাংসের তুলনায় মহিষের মাংসে চর্বির পরিমাণ কম, যা ওজন কমানোর জন্য বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে।

আয়রন: মহিষের মাংসে আয়রনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি, যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ভিটামিন বি১২: মহিষের মাংসে ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ বেশি, যা স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের শক্তি উৎপাদনে সহায়ক।

জিঙ্ক: মহিষের মাংস শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সহায়ক এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ফসফরাস: ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে, এবং এটি শরীরের শক্তির উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে।

এনার্জি প্রদান: মহিষের মাংস উচ্চ ক্যালোরি প্রদান করে, যা শারীরিক পরিশ্রমের পর শরীরকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

মহিষের মাংস খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও, কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় বা সঠিকভাবে রান্না না করা হয়। 

 মহিষের মাংসের অপকারিতা

উচ্চ চর্বি ও কোলেস্টেরল: মহিষের মাংসের চর্বির পরিমাণ গরুর মাংসের তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল সন্নিবেশিত খাবার হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত মহিষের মাংস খাওয়া উচিত নয়।

ওজন বৃদ্ধির সমস্যা: মহিষের মাংসে উচ্চ ক্যালোরি এবং চর্বি থাকায় অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের ওজন বাড়াতে পারে। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী নাও হতে পারে।

হজমের সমস্যা: মহিষের মাংস তুলনামূলকভাবে ভারী এবং কিছু মানুষের জন্য হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল। অতিরিক্ত মহিষের মাংস খেলে পেট ফোলা বা বদহজম হতে পারে।

প্রাণী কল্যাণের দৃষ্টিকোণ: মহিষের মাংস উৎপাদন প্রক্রিয়া বা যেভাবে পশু পালন করা হয় তা অনেকের কাছে নৈতিক বা প্রাণী কল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে, বিশেষ করে যারা নিরামিষভোজী বা পশু অধিকার সচেতন।

হরমোন ও এন্টিবায়োটিক: অনেক সময় মহিষের মাংস প্রক্রিয়া করতে ব্যবহৃত হরমোন বা এন্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এলার্জি: কিছু লোকের মহিষের মাংস বা দুধের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যাসহ ত্বকের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।