ঢাকা রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫

মানসিক চাপ কমাবে যে ৮ যোগ ব্যায়াম

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

মানুষের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভালো খাবারের পাশাপাশি কিছু যোগ ব্যায়াম হতে পারে কার্যকরী একটি উপায়।

শুধু শরীরের যত্ন নেওয়া, ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানো, ব্যথা কমানোই নয়, প্রতিটি মানুয়ের দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস কমাতেও বেশ ভালো ভূমিকা রাখে যোগ ব্যায়াম। যে আটটি যোগ ব্যায়াম করলে একজন মানুষকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে সহায়তা করবে।

যোগ ব্যায়াম করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একজন মানুষ চাইলে বাড়িতে বা নিজের সুবিধাজনক যেকোনো জায়গায় বসে এগুলো করতে পারবেন। আবার এগুলো যেমন একা বসে করা যায়, তেমনি গ্রুপ করেও করতে পারবেন।

আসুন জেনে নেওয়া যাক যোগ ব্যায়ামের আটটি আসন সম্পর্কে...

১) উত্থানাসন (দাঁড়িয়ে সামনের দিকে বাঁক) : উত্থানাসন মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং কিডনি ও যকৃতকে উদ্দীপিত করে। সেই সঙ্গে এটি পিঠ, হ্যামস্ট্রিং এবং কাঁধকে প্রসারিত করে।

পদ্ধতি

  •  তাড়াসন বা মাউন্টেন পোজে দাঁড়ান এবং হাতগুলো কোমরে রাখুন।
  • হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে ধীরে ধীরে ধড়কে পায়ের ওপর ভাঁজ করুন। এ ক্ষেত্রে কোমর থেকে নয়, বরং পিঠ থেকে ধড় ভাঁজ করুন।
  • হাতগুলো মাটিতে বা পায়ের পাশে রাখুন।
  • শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড লম্বা করুন এবং নিঃশ্বাস ছাড়ুন। তারপর ধীরে ধীরে পায়ের দিকে ঝুঁকুন।
  • গলা লম্বা করুন, মাথা নিচের দিকে প্রসারিত করে কাঁধগুলোকে নিচের দিকে টেনে কোমরের দিকে নিয়ে যান।

সতর্কতা : গর্ভাবস্থা, গ্লুকোমা, সায়াটিকা বা নিচের পিঠ, গোঁড়ালি, বা হাঁটুতে আঘাত থাকলে আসনটি এড়িয়ে চলুন।

২) পশ্চিমোত্থানাসন (বসা অবস্থায় সামনের দিকে বাঁক) : পশ্চিমোত্থানাসন মানসিক চাপ কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি পিঠ ও পায়ের পেশি প্রসারিত করে।

পদ্ধতি

  • দণ্ডাসন বা স্টাফ পোজে বসুন এবং পা সামনের দিকে সোজা করে রাখুন।
  • হাতগুলোকে পাশ থেকে উঠিয়ে মাথার উপরে প্রসারিত করুন।
  • শ্বাস নিন এবং মেরুদণ্ড লম্বা করুন।
  • নিঃশ্বাস ছাড়ুন এবং কোমর থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।
  • পা টানটান করে পায়ের গোঁড়ালি বা হাঁটু ধরে রাখুন।

পরামর্শ : পিঠ সোজা রাখলে শ্বাস নিতে আরাম পাবেন।

৩) মার্জারাসন থেকে বিতিলাসন (বিড়াল-গরু আসন): মার্জারাসন-বিতিলাসন মেরুদণ্ডকে সহজ করতে এবং মানসিক শান্তি আনতে সহায়ক।

পদ্ধতি

  • হাঁটু ও হাতে ভর দিয়ে মাটিতে বসুন এবং নিজের পিঠ সোজা রাখুন।
  • শ্বাস নিন, কোমর ও বুকে উত্তোলন করুন এবং মাথা তুলুন।
  • নিঃশ্বাস ছাড়ুন, পিঠ গুটিয়ে উপরের দিকে তুলুন এবং মাথা নিচে নাভির দিকে নিয়ে আসুন।
  • এভাবে ১০-২০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

পরামর্শ : ঘাড়ে আঘাত থাকলে সাবধানে করুন।

৪) সুখাসন (সহজ আসন) : সুখ আসন বলতে যেকোনো আরামদায়ক ক্রস-লেগ অবস্থানকে বোঝায়। আরাম পাওয়ার জন্য তোয়ালে বা বোলস্টার ব্যবহার করতে পারেন।

পদ্ধতি

  • নিতম্বের নিচে সাপোর্ট বা ভর দিয়ে বসুন, যাতে কোমর হাঁটুর চেয়ে উঁচুতে থাকে।
  • কাঁধ ও মাথা সোজা রেখে ক্রস-লেগ অবস্থানে আরামদায়কভাবে বসুন।
  • হাতগুলো থাই বা কোলে রাখুন।
  • শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড লম্বা করুন, নিঃশ্বাস ছাড়ুন এবং কোমর মাটিতে চেপে বসুন।

পরামর্শ : আসনটি সাধারণত শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি হাঁটু, গোঁড়ালি প্রসারিত করে, পিঠকে শক্তিশালী করে এবং কোমরের টান কমায়।

৫) জানু শীর্ষাসন (মাথা থেকে হাঁটু সামনের দিকে বাঁক) : জানু শীর্ষাসন পিঠের অবস্থান উঁচু করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

পদ্ধতি

  • দণ্ডাসন বা স্টাফ পোজে বসুন এবং পা সামনে প্রসারিত করে পিঠ সোজা রাখুন।
  • ডান হাঁটু বাঁকিয়ে ডান পায়ের তলাটি বাম ঊরুর ভেতরে রাখুন।
  • শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড লম্বা করুন।
  • নিঃশ্বাস ছেড়ে ডান হাতটি বাম ঊরুর বাইরের দিকে রাখুন এবং বাম হাতটি বাম কোমরের পেছনে রাখুন।
  • কোমর থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন, বাম পায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে ডান হাত দিয়ে বাম গোড়ালি ধরুন।
  • শ্বাস নিয়ে বুক সামনে ঠেলুন এবং নিঃশ্বাস ছাড়লে পাঁজর বাম হাঁটুর দিকে ঘোরান।
  • শ্বাস নিয়ে বুক তুলুন, পোজ থেকে বেরিয়ে আসুন এবং দণ্ডাসনে ফিরে আসুন। এবার অন্যদিকে একইভাবে করুন।

পরামর্শ : হাঁটুর ব্যথা থাকলে বাঁকানো হাঁটু সোজা পায়ের কাছে রাখুন।

৬) সেতু বন্ধাসন (সেতু আসন) : সেতু বন্ধাসন পিঠ, কোমর ও ঊরুর পেশি শক্তিশালী করে।

পদ্ধতি

  • পিঠের ওপর শুয়ে পড়ুন, হাঁটু বাঁকানো এবং পা ও পায়ের আঙুলগুলো সমান্তরালভাবে কোমরের সঙ্গে রাখুন। পা গুলোকে নিতম্বের কাছে রাখুন।
  • পায়ের সাহায্যে নিচের দিকে দৃঢ়ভাবে চাপ দিন। তারপর শ্বাস নিন এবং নিতম্ব উত্তোলন করুন (নাভির পরিবর্তে পেলভিক বোন থেকে তুলুন)।
  • হাতগুলোকে পিঠের নিচে মাটিতে রাখুন এবং কলার বোন প্রশস্ত করুন। নিজের ঊরু শক্ত রাখুন এবং পায়ের গোঁড়ালি দিয়ে নিচে চাপ দিন। তারপর ঊরু ও নিতম্ব উঁচুতে তুলে রাখুন।
  • নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে হাতগুলো ছেড়ে মাটিতে শিথিলভাবে বিশ্রাম নিন।

পরামর্শ : দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে পিঠের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।

৭) শবাসন (মৃতদেহ আসন) : শবাসন পুরো শরীরকে শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমায়।

পদ্ধতি

  • পিঠের ওপর শুয়ে পড়ুন। পাগুলোকে আলাদা রাখুন এবং মাটির ওপর এমনভাবে রাখুন যাতে পা দুটি দুই পাশে পড়ে যায়।
  • হাতগুলোকে শরীরের পাশে রাখুন এবং তালু উপরের দিকে রাখুন। আঙুলগুলো শিথিল রাখুন এবং স্বাভাবিকভাবে ভাঁজ হয়ে যেতে দিন।
  • পুরো শরীর ও মুখ শিথিল করুন। এ সময় নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।
  • ৫-১০ মিনিট স্থির থাকুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোনিবেশ করুন।
  • শ্বাস গভীর করুন এবং এ সময় হাত ও পায়ের আঙুল নাড়ান। সেই সঙ্গে পুরো শরীর প্রসারিত করুন।
  • হাঁটু বুকে টেনে নিয়ে একপাশে ঘুরুন। তারপর চোখ বন্ধ রেখে কিছু শ্বাস নিন এবং এই অবস্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। তারপর ধীরে ধীরে বসার অবস্থানে আসুন।

পরামর্শ: ঘুমানোর আগে আসনটি করলে ভালো ঘুম হয়।

৮) বালাসন (শিশু আসন) : বালাসন কোমর ও পিঠ প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং মানসিক শান্তি আনে।

পদ্ধতি

  • হাঁটু গেড়ে বসুন এবং কোমর থেকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।
  • পেটকে ঊরুর ওপর রাখুন এবং কপাল মাটিতে স্পর্শ করুন।
  • চোখ, চোয়াল এবং কাঁধ শিথিল রাখুন।
  • যতক্ষণ আপনি চান ততক্ষণ এ অবস্থায় থাকুন।

পরামর্শ : ঘাড় সোজা রাখুন এবং প্রয়োজন হলে সাপোর্ট বা ভর ব্যবহার করুন।