খাবারের টেবিলে মুরগির ডিমের পাশাপাশি আজকাল আরও একটি ক্ষুদ্রাকৃতির ডিমের দেখা মেলে আর তা হলো কোয়েলের ডিম। ছোট আকৃতির হলেও এতে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। বিশ্বের অনেক দেশেই কোয়েলের ডিম সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়েলের ডিম শুধু স্বাদের জন্যই নয়, বরং পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকার জন্যও খ্যাতি অর্জন করেছে।
পুষ্টিগুণ
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)- তথ্য অনুযায়ী, একটি কোয়েলের ডিমে রয়েছে-
প্রোটিন: উচ্চমানের আমিষ, যা কোষ গঠনে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি ১২: স্নায়ুতন্ত্র ও রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
সেলেনিয়াম ও আয়রন: কোয়েলের ডিম রক্তশূন্যতা রোধে কার্যকর।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: বার্ধক্য বিলম্বিত করে, ত্বককে রাখে উজ্জ্বল। ৫টি কোয়েলের ডিম মিলে একটি মাঝারি মুরগির ডিমের সমপরিমাণ ওজন হলেও এতে বেশি পরিমাণ প্রোটিন ও ফসফরাস পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. অ্যালার্জির ঝুঁকি কম
কোয়েলের ডিমে ওভোমুকয়েড প্রোটিন থাকে, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। তাই অনেক ক্ষেত্রে এটি অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক, যদিও ডিমে অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি।
২. অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসে সহায়তা
আন্তর্জাতিক কিছু গবেষণা অনুযায়ী, কোয়েলের ডিমে থাকা বিশেষ প্রোটিন শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য
উচ্চমাত্রার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স স্নায়ু শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
কোয়েলের ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল উপাদান শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে।
খাবারে বৈচিত্র্য
কোয়েলের ডিম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার- সিদ্ধ, ফ্রাই, অমলেট, সালাদ কিংবা স্ন্যাকস আইটেমে এটির ব্যবহার খাবারে বৈচিত্র্য আনতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এর আকৃতি ও স্বাদের কারণে অনেক সময় এটি খেতে আগ্রহী হয়।
ছোট হলেও কোয়েলের ডিমে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিমূল্য। এটি আমাদের খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর একটি সংযোজন হতে পারে, যদি তা সঠিকভাবে এবং পরিমিত মাত্রায় খাওয়া হয়। সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও তুলনামূলক কম অ্যলার্জিক এই ডিম নিঃসন্দেহে একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক উপহার।
সতর্কতা ও পরামর্শ
কোয়েলের ডিম কাঁচা খাওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যে দেখা যায়, কিন্তু এটি ব্যাকটেরিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে (যেমন- স্যালমোনেলা)।
সঠিকভাবে সিদ্ধ করে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
তবে ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোয়েলের ডিম অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়।
আপনার মতামত লিখুন :