শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

শিং মাছের উপকারিতা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

রান্না করা শিং মাছ। ছবি: সংগৃহীত

রান্না করা শিং মাছ। ছবি: সংগৃহীত

শিং মাছ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জলাভূমিতে সহজলভ্য এক প্রজাতির ছোট আকারের স্বাদুপানির মাছ। এ মাছের শরীরে কাঁটা থাকলেও এর স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও ঔষধি বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি বাঙালির পাতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। গ্রামবাংলার পুকুর, ডোবা, খাল-বিলে বেড়ে ওঠা এই মাছ প্রাকৃতিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং হিমশীতল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় শিং মাছ দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাছটির পুষ্টিমান যেমন বেশি, তেমনি হজমযোগ্যও বটে। এ কারণে শিশু, বৃদ্ধ এবং রোগীদের জন্য এটি এক আদর্শ প্রাকৃতিক পুষ্টি-উৎস।

শিং মাছের পুষ্টিগুণ

উচ্চমাত্রার প্রোটিন: শিং মাছ প্রোটিনসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছের মাংসে প্রায় ১৬-২০ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা দেহের কোষ গঠন, ক্ষয়, ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

লৌহ: এ মাছ রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর। এতে থাকা উচ্চমাত্রার আয়রন (Fe) রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য উপকারী।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: শিং মাছের তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস: হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এই মাছের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য এটি হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: শিং মাছে রয়েছে ভিটামিন বি১ , বি২, বি৬ এবং বি১২ যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মেটাবলিজম সক্রিয় রাখে।

কম ক্যালরি: এই মাছ চর্বিহীন ও সহজে হজমযোগ্য হওয়ায় রোগী ও শিশুদের জন্য আদর্শ। এটি পেট ঠান্ডা রাখে এবং অন্ত্রের কাজ সহজ করে।

শিং মাছের বৈশিষ্ট্য কী?

শিং মাছের দেহ লম্বা ও চাপা। এদের পেট গোলাকার। এদের মাথা ক্ষুদ্রাকৃতির, দৃঢ়ভাবে চাপা এবং পাতলা ত্বক দ্বারা আবৃত। চোখ ক্ষুদ্রাকৃতির এবং মাথার সম্মুখভাগের পার্শ্বদেশে অবস্থিত।

দেশি শিং মাছ চেনার উপায়

বাজারে গিয়ে আসল দেশি শিং মাছ চেনা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে, বিশেষ করে যখন নকল বা বিদেশী প্রজাতির শিং মাছও বিক্রি হচ্ছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দেওয়া হলো যা আপনাকে আসল দেশি শিং মাছ চিনতে সাহায্য করবে:

রং: দেশি শিং মাছের গায়ের রং সাধারণত গাঢ় ধূসর বা কালো হয়। পেটের দিকটা হালকা রঙের, প্রায়শই সাদা বা হালকা ধূসর।

আকার: সাধারণত ১৫-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। বড় আকারের শিং মাছ ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

দেহের গঠন: লম্বা, চ্যাপ্টা দেহ, যার মাথার দিকটা চওড়া এবং লেজের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে যায়।মুখ: বড় মুখ, যার চারপাশে চারটি জোড়া স্পর্শক থাকে।

আঁশ: দেহে প্রায় আঁশ নেই বললেই চলে, যা এর চামড়াকে মসৃণ করে তোলে।
বিষাক্ত কাঁটা: পেক্টোরাল ফিনের কাছে দুটি শক্ত ও বিষাক্ত কাঁটা থাকে। এটি দেশি শিং মাছের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।

চামড়ার অনুভূতি: হাত দিয়ে স্পর্শ করলে চামড়া মসৃণ ও পিচ্ছিল অনুভব হবে।
গন্ধ: তাজা দেশি শিং মাছের একটি বিশিষ্ট, হালকা মিষ্টি গন্ধ থাকে।

নকল বা বিদেশী প্রজাতি থেকে পার্থক্য

রঙের পার্থক্য: বিদেশী প্রজাতির শিং মাছ প্রায়শই হালকা রঙের হয়, যেমন হালকা ধূসর বা বাদামী।
আকারের পার্থক্য: নকল বা বিদেশী প্রজাতির শিং মাছ সাধারণত দেশি শিং মাছের চেয়ে বড় হয়।
চামড়ার গঠন: বিদেশী প্রজাতির শিং মাছের চামড়ায় অনেক সময় হালকা আঁশ থাকে, যা দেশি শিং মাছে প্রায় অনুপস্থিত।
মুখের আকার: দেশি শিং মাছের তুলনায় বিদেশী প্রজাতির শিং মাছের মুখ সাধারণত ছোট হয়।

শিং মাছের উপকারিতা

শিং মাছ শুধু সুস্বাদু নয়, এটি একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আসে। বিশেষ করে দুর্বল, অসুস্থ ও রক্তশূন্যতায় ভোগা মানুষের জন্য এটি খুবই উপযোগী। নিচে এর উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

রক্তশূন্যতা দূর করে: শিং মাছ আয়রনসমৃদ্ধ, যা শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক। নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) দূর হয়।

দুর্বলতা কাটাতে কার্যকর: রোগ থেকে সেরে ওঠার সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শিং মাছের উচ্চ প্রোটিন ও খনিজ শরীরকে দ্রুত শক্তি ফেরাতে সাহায্য করে।

হজমে সহায়ক ও পেট ঠান্ডা রাখে: এ মাছ সহজপাচ্য এবং পেট ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। গ্যাস্ট্রিক, পেটের জ্বালা বা হজমে সমস্যা থাকলে শিং মাছের ঝোল বিশেষ উপকার দেয়।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে: শিং মাছে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য খুবই উপকারী।

মানসিক চাপ হ্রাস করে: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং মানসিক চাপ ও অবসাদ দূর করতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: শিং মাছে থাকা জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: শিং মাছে রয়েছে ভালো মানের চর্বিহীন প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার: গ্রামবাংলায় শিং মাছকে “প্রাকৃতিক টনিক” বলা হয়। গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখা, জ্বরের পর দুর্বলতা কাটানো বা শরীর পুনরুজ্জীবিত করতে এটি ব্যবহার করা হয়।

গর্ভাবস্থায় শিং মাছ খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সময়। এই সময়ে খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি মায়ের স্বাস্থ্য এবং ভ্রূণের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে ২-৩ বার শিং মাছ খাওয়া উত্তম। প্রতিবার প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম শিং মাছ খাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত ২ বার শিং মাছ খাওয়া উচিত।

যেকোনো খাবারের যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু  অপকারিতাও রয়েছে। 

শিং মাছের অপকারিতা

বেশি পরিমাণে খেলে পেটের গ্যাস হতে পারে: যদিও শিং মাছ সহজপাচ্য, তবে অতিরিক্ত খাওয়া বা বেশি তেল-মসলা দিয়ে রান্না করলে অনেকের পেটে অস্বস্তি, গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 শিশু ও বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ: শিং মাছের শরীরে বেশ কিছু সূক্ষ্ম কাঁটা থাকে। শিশু বা দাঁতহীন বৃদ্ধরা কাঁটা নিয়ে সাবধান না হলে গলায় আটকানোর ঝুঁকি থাকে।

সংরক্ষণে অনিয়ম হলে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে: বাজারজাত শিং মাছ যদি ভালোভাবে সংরক্ষণ না করা হয় (যেমন: পর্যাপ্ত ঠান্ডা না রাখা, পচা বা মৃত মাছ বিক্রি), তাহলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে—যা ডায়রিয়া বা ফুড পয়জনিং ঘটাতে পারে।

জীবন্ত মাছের কাঁটা বা শিংয়ের আঘাতে চামড়ার ক্ষত: জীবন্ত শিং মাছ ধরার সময় অনেকে এর কাঁটা বা শিংয়ের আঘাতে আঙুল কেটে বা ফেটে ফেলেন। এতে ব্যথা ও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

দূষিত পরিবেশে চাষ করা মাছ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: অনেক সময় শিল্পবর্জ্য বা রাসায়নিক দ্রব্যযুক্ত পানিতে চাষকৃত শিং মাছ শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে পারে। এমন মাছ দীর্ঘদিন খেলে কিডনি ও লিভারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!