সহজলভ্য পেয়ারার অসাধারণ ১০টি স্বাস্থ্যগুণ।পেয়ারা বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি ফল। এটি শুধু স্বাদের জন্যই নয়, বরং স্বাস্থ্যগত উপকারিতার কারণেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন দিক থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় রয়েছে
প্রচুর ভিটামিন-সি
আঁশ বা ফাইবার
ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-বি
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম
প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পেয়ারা ভিটামিন-সি'তে ভরপুর। প্রতিদিন পেয়ারা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, ফলে সর্দি-কাশি বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
হজম শক্তি উন্নত করে
পেয়ারায় প্রচুর আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন পেয়ারা অত্যন্ত উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা অত্যন্ত ভালো।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
পেয়ারা ফ্যাট ও ক্যালোরিতে কম, কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর। এটি খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
পেয়ারায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের বলিরেখা ও দাগ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখে।
হার্টের সুস্থতা রক্ষা করে
পেয়ারায় থাকা পটাসিয়াম ও আঁশ খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
চোখের জন্য উপকারী
পেয়ারায় থাকা ভিটামিন-এ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে।
মানসিক চাপ কমায়
পেয়ারায় থাকা ম্যাগনেশিয়াম নার্ভ শান্ত রাখে এবং মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
দাঁত ও মাড়ি শক্তিশালী করে
পেয়ারার পাতা এবং ফল মাড়ি ও দাঁতের সুস্থতা রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। এটি মুখের দুর্গন্ধ কমাতে এবং দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি আকারের পেয়ারা খাওয়া নিরাপদ।
ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
পাকা বা আধাপাকা পেয়ারা খাওয়া ভালো, অতিরিক্ত কাঁচা পেয়ারা খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
সকালে বা বিকালে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
সতর্কতা
অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে কিছু ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারে।
যাদের পাকস্থলির সমস্যা বেশি, তাদের পরিমিত খেতে হবে।
অতিরিক্ত বীজসহ খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ বীজের কারণে অনেক সময় হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ত্বক ও হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। তবে যেকোনো ভালো জিনিসের মতো, পেয়ারাও পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় সহজলভ্য এই ফলটি রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।
আপনার মতামত লিখুন :