সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৯:১৭ এএম

যে গ্রামে গাড়ি নেই

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৯:১৭ এএম

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

ইতিহাসের পাতা উল্টালে মিলে যায় এক নির্জন মধ্যযুগীয় গ্রামের গল্প- যার নাম মুরেন। আল্পসের খাঁজে খাঁজে জড়ানো এই গ্রাম যেন যুগের পর যুগ পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে নিজস্ব ছন্দে বাঁচত। কিন্তু সেই নীরবতা এখন বদলে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া কেবল কার- শিলথর্নবাহনের আগমনে। মাত্র চার মিনিটে ৭৭৫ মিটার ওপরে উঠে যাওয়া এই কেবল কার যেন নিঃশব্দে মুরেনের দরজা খুলে দিচ্ছে বাইরের পৃথিবীর জন্য।

গত বছরের শেষ দিকে, এক কনকনে শীতের দিনে জেনেভা থেকে তিন ঘণ্টার মনোরম ট্রেনযাত্রা শেষে পৌঁছাই লাউটারব্রুনেনের উপত্যকায়। সেখান থেকেই শুরু হয় গাড়িমুক্ত পাহাড়ি জনপদ মুরেনে ওঠার যাত্রা। পথে পথেই আল্পসের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে, আর উপরে উঠতে উঠতে মনে হয় যেন গল্পের এক অজানা গ্রামে পা রাখতে চলেছি।

মুরেনের ইতিহাস ছিল দূর্গম জীবনের গল্পে ভরা। একসময় গ্রামের মানুষ খচ্চরের পিঠে তিন ঘণ্টা নেমে যেতেন উপত্যকায় বাজার করতে। ১৮৯১ সালে ন্যারো-গেজ রেল আর পরে ১৯৬৫ সালে গিমেলওয়াল্ডের দিকে কেবলওয়ে চালু হওয়ায় জীবনে আসে নতুন স্বস্তি। আর আজ, শিলথর্নবাহনের মতো আধুনিক কেবল কার এই গ্রামকে একেবারে নতুন আলোয় তুলে ধরছে সবার সামনে।

স্টেচেলবার্গে কাঁচ-ঘেরা কেবিনে চড়তেই মনে হলো, উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা কাঠের কটেজ আর তুষার মোড়া পাইনগাছ যেন কোনো রূপকথার দৃশ্য। ১৫৯.৪ শতাংশ খাড়াই! অথচ যাত্রা এতই মসৃণ যে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।

শিলথর্ন শৃঙ্গের পাদদেশে প্রাকৃতিক ছাদের মতো অবস্থান মুরেনকে করেছে একেবারে অনন্য। ঠিক সেই কারণেই এখানে কোনোদিন সড়ক তৈরি সম্ভব হয়নি। ফলে আজও মুরেনে আসা–যাওয়ার একমাত্র ভরসা কেবল কার আর ফানিকুলার। গ্রামের তরুণ বাসিন্দা মাইকেল অ্যাবেগলেন জানান, ‘আমাদের কাছে কেবল কারই যেন নিত্যদিনের বাস। ডাক্তার থেকে শুরু করে নর্তকী পর্যন্ত- সব প্রয়োজনে উপত্যকায় নামতেই হয়।’

গ্রামে পৌঁছে বারান্দা থেকে আইগার–মোঞ্চ–জংফ্রাউয়ের রাজকীয় দৃশ্য দেখা মাত্রই মন ভরে উঠল। মুরেনে হাঁটা শুরু করতেই বুঝলাম- এই গ্রামটিকে আসলে পায়ে হেঁটেই আবিষ্কার করা যায়। ছোট ছোট রাস্তাজুড়ে সারি সারি হোটেল, আল্পাইন পনিরের রেস্তোরাঁ, চকোলেটের দোকান আর কাঠের তৈরি স্যুভেনির- সবই যেন প্রাচীন সৌন্দর্যের নীরব সাক্ষী।

১৮৭৪ সালে নির্মিত হোটেল মুরেন প্যালেস এখনও গ্রামের গর্ব। একসময় রিতা হেওয়ার্থসহ বহু হলিউড তারকার পদচারণায় মুখর ছিল এই প্রাসাদসদৃশ হোটেলটি। নির্জনে তুষার পড়তে পড়তে আইগার গেস্টহাউসের পাবে গ্লুহওয়েইনের একমগ উষ্ণতা যেন এ গ্রামের আসল প্রাণ।

মুরেন শুধু সৌন্দর্যের গ্রাম নয়, এটা সুইস স্কি–ইতিহাসের জন্মভূমিও। ১৮০০–এর দশকের শেষ দিকে ব্রিটিশ স্কিয়াররা যখন গ্রামটিকে আবিষ্কার করে, তখন থেকেই বদলে যায় মুরেনের ভাগ্য। বার্নার্ড লুনের প্রপিতামহ হেনরি লুন এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশ পর্যটকদের এখানে নিয়ে আসতে শুরু করেন। তার দাদা আর্নল্ড লুন ১৯২২ সালে বিশ্বের প্রথম স্লালম স্কি রেস আয়োজন করেন। এরপর ১৯৩১ সালে মুরেনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আলপাইন ওয়ার্ল্ড স্কি চ্যাম্পিয়নশিপ।

প্রায় এক শতাব্দী পরে আজও মুরেন শীতকালে স্কিয়ারদের স্বর্গ। ৫৪ কিমি লম্বা স্কি-পিস্ট আর শিলথর্ন থেকে লটারব্রুনেন পর্যন্ত ১৬ কিমি স্কি করার সুযোগ- যেন শীতের স্বপ্নরাজ্য। গ্রামের বাসিন্দা অ্যালান রামসে জানান, ‘শীতের সকালে শিলথর্নে এক কাপ কফি আর তারপর স্কি- এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ।’

কিন্তু মুরেন শুধু শীতের গ্রাম নয়। গ্রীষ্ম এলে পাহাড় যেন নতুন রূপে জেগে ওঠে। তৃণভূমিতে ফুল ফোটে, দূর পাহাড়ে ঝরঝর করে পড়ে জলপ্রপাত, আর বাতাসে মিশে থাকে তাজা ঘাসের গন্ধ। স্থানীয় ট্রেইল রানার বেলিন্ডা বুহলার বলেন, ‘পাহাড়গুলো ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়, ঠিক যেন বিশাল এক ক্যানভাসে রঙ ঢালা হচ্ছে।’

তিনি পরামর্শ দেন- ট্রেইলে হাঁটুন। খুব বেশি দূরে যেতে হয় না; তবে প্রকৃতির নীরবতা আর সৌন্দর্য হৃদয় ভরে দেবে।

মুরেনের অসাধারণতা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে একটাই কথায়- এটি কোনো দর্শনীয় স্থান নয়, এটি এক অনুভূতির জায়গা। বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে। বুহলার যেমন বলেন, ‘বড় হয়ে মনে হয়েছিল মুরেন খুব ছোট। পরে বুঝেছি, এই ছোট্ট গ্রামটাই আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে।’

মাত্র দু’দিনের সফর শেষে আমারও মনে হলো- মুরেনকে শব্দে বোঝানো যায় না। এই গ্রামকে শুধু অনুভব করা যায়।

Link copied!