ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

কাঁচা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম
কাঁচা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা। ছবি: সংগৃহীত

পুষ্টিতে ভরপুর কাঁচা আম, তবে অতিরিক্ত খেলে হতে পারে সমস্যা।গ্রীষ্মকাল মানেই আমের মৌসুম। পাকা আমের মিষ্টি স্বাদ যতটা জনপ্রিয়, ঠিক ততটাই কাঁচা আমও প্রিয় অনেকের কাছে। টক স্বাদের কাঁচা আম কেবল মুখরোচক নয়, এটি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কাঁচা আম খেলে শরীরে কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও পড়তে পারে। তাই কাঁচা আম খাওয়ার আগে এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরি।

কাঁচা আমের উপকারিতা

শরীর ঠান্ডা রাখে

কাঁচা আম শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গরমে অতিরিক্ত ঘাম বা পানিশূন্যতা এড়াতে কাঁচা আম খুবই কার্যকর।

হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করে

কাঁচা আম থেকে তৈরি 'আম পানা' গ্রীষ্মের দাবদাহে শরীরকে শীতল রাখতে এবং হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

হজমশক্তি বাড়ায়

কাঁচা আমের মধ্যে থাকা উপকারী উপাদান হজমের জন্য উপকারী। এটি পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

কাঁচা আম লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি লিভারের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে, ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা ঠিক থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁচা আম খেলে সাধারণ ঠান্ডা-কাশি, ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীর লড়তে সক্ষম হয়।

দাঁত ও মাড়ির জন্য উপকারী

কাঁচা আম দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি মাড়ির রক্তপাত, মুখের দুর্গন্ধ এবং দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা কমাতে সহায়ক।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

কাঁচা আমে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং আঁশের পরিমাণ বেশি। এটি খিদে কমায় এবং পেট ভরা রাখে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ কাঁচা আম ত্বকের জন্য ভালো। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ব্রণের প্রবণতা কমায় এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করে

কাঁচা আম শরীরের পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে। গরমকালে শরীরে পানিশূন্যতা রোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর।

কাঁচা আমের অপকারিতা

অতিরিক্ত খেলে পাকস্থলির সমস্যা

অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে পাকস্থলির সমস্যা, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা বা বদহজম হতে পারে।

গলা ব্যথা বা ইনফেকশন

অনেক সময় কাঁচা আম বেশি খেলে গলা ব্যথা, গলার খুসখুসে ভাব বা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত টক স্বাদের কারণে দাঁতের ক্ষতি

খুব বেশি কাঁচা আম খাওয়ার ফলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে। এতে দাঁত দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

রক্তচাপ বৃদ্ধি

অতিরিক্ত কাঁচা আমে কিছু ক্ষেত্রে সোডিয়াম বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য।

অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে

খুব বেশি কাঁচা আম বা 'আম পানা' খেলে অনেক সময় ডায়রিয়া বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে, যা শরীর দুর্বল করে দেয়।

গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা

টক স্বাদের কারণে অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে অ্যাসিডিটি বা পেটের গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

কাঁচা আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম

  • প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি আকারের কাঁচা আম খাওয়া নিরাপদ।
  • ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
  • গরম মশলা বা অতিরিক্ত লবণ দিয়ে না খাওয়াই ভালো।
  • যাদের পাকস্থলির সমস্যা আছে, তারা সীমিত পরিমাণে খাবেন।
  • হিটস্ট্রোক বা পানিশূন্যতা রোধে 'আম পানা' পান করা উত্তম।

কাঁচা আম সহজলভ্য একটি পুষ্টিকর ফল, যা শরীর ঠান্ডা রাখা, হিটস্ট্রোক রোধ, লিভার পরিষ্কার রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ নানা উপকারে আসে। তবে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে খেলে পেটের সমস্যা, গলা ব্যথা বা দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে কাঁচা আম খেলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং গরমকালের কষ্টও অনেকটাই কমে যাবে।