ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

যেভাবে করবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০২:১১ এএম
ড্রাইভিং লাইসেন্স। প্রতীকী ছবি

শুধুমাত্র মোটর গাড়ির চালানোর স্বীকৃতি স্বরূপ অনুমতিপত্র নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যকলাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এছাড়া, এর সঙ্গে চালকের কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি পথচারি এমনকি চালকের নিজেরও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে থাকে।

বাংলাদেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি সর্বসাধারণের ব্যবহৃত কোনো রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন না। সুতরাং দেশের যেকোনো স্থানে গাড়ি চালানোর জন্য বৈধতার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা

মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস (অনলাইন আবেদনে সাধারণত এসএসসি পাস চাওয়া হয়)।
অপেশাদার লাইসেন্স পেতে হলে বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
যেকোনো ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রথম ও আবশ্যকীয় ধাপ হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ।
পেশাদার লাইসেন্স পেতে বয়স হতে হবে অন্তত ২০ বছর।

পেশাদার লাইসেন্সের ধরন

হালকা মোটরযান (ওজন ২৫০০ কেজির নিচে): ন্যূনতম বয়স ২০ বছর।
মধ্যম মোটরযান (২৫০০-৬৫০০ কেজি): বয়স ২৩ বছর এবং ৩ বছরের হালকা লাইসেন্স থাকতে হবে।
ভারী মোটরযান (৬৫০০ কেজির বেশি): বয়স ২৬ বছর এবং ৩ বছরের মধ্যম লাইসেন্স থাকতে হবে।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনলাইনে খুব সহজেই লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে।

১। প্রার্থীর ৩০০ x ৩০০ পিক্সেল সাইজের সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোবাইটের ছবি
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সইসহ পূরণকৃত মেডিকেল সার্টিফিকেট ফর্ম স্ক্যান কপিটি অনুর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট হতে হবে।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট (অনূর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট)।
৪। বর্তমান ঠিকানার গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির বিল (সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট)।

লার্নার ড্রাইভিংয়ের জন্য অনলাইনে কীভাবে আবেদন করবেন?

প্রথমেই বিআরটিএ সেবা বাতায়ন-এ গিয়ে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
এনআইডি'র অনুরূপ তথ্যগুলো দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। পরীক্ষার স্থান নির্বাচন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারিত হবে।
লাইসেন্স ফি জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে যাবে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং এটিই ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার সময় ব্যবহার করা যাবে।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন পদ্ধতি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে পাস করার পর লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বর দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
এ সময় প্রার্থী ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য সুবিধামত তারিখ নির্বাচন করতে পারবেন। এই বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিটি সম্পন্ন হওয়ার পর তৈরিকৃত স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার জন্য প্রার্থীকে এসএমএসর মাধ্যমে সময় জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের (আইডিএল) জন্য আবেদন

দেশের বাইরে গাড়ি চালানোর লাইসেন্সের জন্য আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে অটোমোবাইল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ থেকে। বিআরটিএ এই লাইসেন্স ইস্যু করে না। আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের ধাপগুলো হলো:

সর্বপ্রথম স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।

বিআরটিএর সাইট থেকে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তা পূরণ করতে হবে।

আবেদনের জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে

১। স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি

২। এক কপি পাসপোর্ট ও ৪ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি

৩। পাসপোর্টের ১ থেকে ৪ নং পাতার ফটোকপি

এসব কাগজপত্রসহ আবেদন ফর্মটি অটোমোবাইল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ অফিসে জমা দিতে হবে। লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার পর রশিদে লাইসেন্স সংগ্রহের তারিখ উল্লেখ থাকবে। সে সময়ে অফিসে গিয়ে লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের খরচ কত? 

লার্নার লাইসেন্স

মোটরসাইকেল/হালকা যান: ৩৪৫ টাকা

মোটরসাইকেল + হালকা যান একসাথে: ৫১৮ টাকা

 এই ফিতে পরীক্ষা ফি, ফর্ম ফি ও ব্যান্ড রশিদ ফি অন্তর্ভুক্ত।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি (পরীক্ষা পাশের পর)

অপেশাদার লাইসেন্স    (১০ বছর):    ২৫৪২ টাকা
পেশাদার লাইসেন্স    (৫ বছর):    ১৬৮০ টাকা

আন্তর্জাতিক লাইসেন্স ফি: ২৫০০ টাকা

পুনঃনবায়ন ফি (লাইসেন্স মেয়াদ শেষ হলে)

অপেশাদার (১০ বছর): ২৫৪২ টাকা

পেশাদার (৫ বছর): ১৬৮০ টাকা

জরিমানাসহ বিলম্ব ফি (মেয়াদোত্তীর্ণ হলে): মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ বছর পর পুনঃনবায়নে অতিরিক্ত ৩০০–৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।

ফি পরিশোধ পদ্ধতি

অনলাইনে আবেদন করলে মোবাইল ব্যাংকিং বা কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি ফি জমা দেওয়া যায়। 

ফি নির্ধারিত সরকারি হারে পরিবর্তন হতে পারে। 

পরিবর্তিত ফি ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিআরটিএ-এর সেবা বাতায়ন ওয়েবসাইট ঘুরে দেখুন।

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে গাড়ি চালানো শুধুমাত্র দক্ষতার নয়, সচেতনতারও বিষয়। একজন চালকের ভুলে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। তাই নিয়ম মেনে সঠিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করাই নিরাপদ চালনার সবচেয়ে ভালো উপায়।