ইলিশ শুধু একটি খাদ্য নয়, বরং বাঙালির সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এটি। প্রতি বছর বর্ষা ও শরৎ মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়লেই বাজারে শুরু হয় জমজমাট উৎসব। অনেকেই ইলিশ ভাজা, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ দোপেঁয়াজা, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পোলাও পছন্দ করেন। ইলিশকে ঘিরে এসব আয়োজন যেন বাংলার সংস্কৃতিতে মিশে আছে। অনেকেই বাজারে গিয়ে পদ্মা নদীর ইলিশ খোঁজেন। কারণ পদ্মার ইলিশ স্বাদে অনন্য।
কিন্তু বাজারে গিয়ে যে ইলিশ কিনছেন, সেটি সত্যিই পদ্মার কি না তা বুঝবেন কীভাবে? কারণ অনেক সময়েই সমুদ্র বা অন্য নদীর ইলিশকে পদ্মার বলে বিক্রি করা হয়।
কেন আলাদা পদ্মার ইলিশ
পদ্মা নদীর প্রবল স্রোত, পলি ও খনিজ পদার্থ মাছের খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, পদ্মার পানিতে থাকা ক্ষুদ্র শৈবাল ও প্ল্যাংকটন ইলিশকে করে তোলে বিশেষভাবে পুষ্ট। এ কারণেই পদ্মার ইলিশে জমে ওঠে অতিরিক্ত তেল, আর তৈরি হয় এক অনন্য স্বাদ ও ঘ্রাণ। এই ভৌগোলিক পরিবেশই পদ্মার ইলিশকে অন্য নদী বা সমুদ্রের ইলিশ থেকে আলাদা করে।
গঠন ও রূপের বৈশিষ্ট্য
আকার: পদ্মার ইলিশ সাধারণত ৬০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের হয়।
আকৃতি: পদ্মার ইলিশ শরীর মোটা ও টাইট, লম্বাটে নয়।
রঙ: গায়ে ঝকঝকে রুপালি আভা, বিশেষ করে পেটের অংশ থাকে একেবারে দুধসাদা হয়।
মাংস ও কাঁটার ভিন্নতা
পদ্মার ইলিশের মাংস নরম, তেলতেলে এবং সহজে গলে যায়। রান্নার সময় ঝোল বা ভাজার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ ঘ্রাণ। অন্যদিকে, কাঁটা থাকে পাতলা ও তুলনামূলক নরম। ফলে খেতে গিয়ে অন্য জায়গার ইলিশের মতো বিরক্তি তৈরি করে না।
স্বাদের অনন্যতা
পদ্মার ইলিশের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তার স্বাদ ও ঘ্রাণ। একবার খেলে জিভে লেগে থাকে মিষ্টি স্বাদের মতো অনুভূতি। এই স্বাদই ভোক্তাকে অন্য যে কোনো ইলিশ থেকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়।
বাজারে প্রতারণার বাস্তবতা
বর্তমানে অনেক বিক্রেতা সমুদ্র বা মেঘনার ইলিশকে পদ্মার ইলিশ বলে চালিয়ে দেন। কারণ, পদ্মার ইলিশের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি।
অর্থনীতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্র
বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে পদ্মা-মেঘনা অববাহিকা থেকে। পদ্মার ইলিশ শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বিদেশেও বিপুল জনপ্রিয়। ফলে পদ্মার আসল ইলিশ চেনা কেবল ভোক্তার জন্যই নয়, দেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু রক্ষার ক্ষেত্রেও জরুরি।