বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সুমন কুমার সাহা, সারিয়াকান্দি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

পিঁড়ির সেলুন দেখতে চাইলে

সুমন কুমার সাহা, সারিয়াকান্দি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

পিঁড়ির সেলুন দেখতে চাইলে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্বভাবগতভাবেই মানুষ সুন্দরের পূজারি। ছেলেদের সৌন্দর্যের অনেকটাই বহন করে চুল-দাড়িতেই। তাই সৌন্দর্যবর্ধনে নরসুন্দর বা নাপিতদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। রূপসজ্জা একসময় শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও আধুনিক যুগে মেয়ে, ছেলে উভয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। ফলে মেয়েদের বিউটি পার্লারের পাশাপাশি নগরে গড়ে উঠেছে ছেলেদের জন্য জেন্টস পার্লার। নিজেকে আরেকটু ব্যক্তিত্বপূর্ণ করে গড়ে তোলা, ত্বকে রোদ-বৃষ্টিসহ রাস্তার ধুলাবালি আর নানা ধরনের রোগ-জীবাণুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা- এসব কিছুই ছেলেদের রূপসজ্জা। ইদানীং ছেলেদের পার্লারগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। জেন্টস পার্লারে রয়েছে পুরুষদের রূপসজ্জার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ সুবিধা। এদের মধ্যে হেয়ার কাটিং এবং বিয়ার্ড শেভিং সবচেয়ে পরিচিত। তা ছাড়া রয়েছে এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু, হারবাল শ্যাম্পু, সুগন্ধি শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পুর সাহায্যে চুল ধোয়া। অন্যদিকে আরামদায়ক বডি ম্যাসাজ, স্পা, স্টিম বাথ প্রভৃতির সুযোগও রয়েছে। জেন্টস পার্লারগুলো রয়েছে ওয়েটিং রুম ব্যবস্থা; যেখানে সময় কাটানোর জন্য রয়েছে টেলিভিশন। এ ছাড়াও থাকে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন বা কিডস জোন; চুল কাটতে আসা শিশু কিংবা অভিভাবকদের সঙ্গে আসা শিশুদের জন্য এই জোন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে জেন্টস পার্লারগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আনাচে-কানাচে আধুনিক ছেলেদের সেলুনে ভিড় বেড়েই চলেছে। এর মাঝেও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর বাজার, কুতুবপুর, বড়িকান্দি, পাকুল্লা, হাসনাপাড়া  হাটবাজারে নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা মেটাতে আজও টিকে আছে আবহমান বাংলার সেই চিরচেনা পিঁড়িতে বসা সেলুন।
জানা যায়, হাট-বাজারের পরিত্যক্ত খোলা জায়গায়, রাস্তার কিনারে, ফুটপাতে ছাতা ও পলিথিনের নিচে বসে বংশ পরম্পরায় পিঁড়িতে বসা সেলুনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন নাপিতরা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে দরিদ্র লোকেরা হাটবারে চুল কাটতে এসব সেলুনে আসেন। তবে যারা আসেন তাদের অধিকাংশই বৃদ্ধ ও প্রবীণ। এসব সেলুনে চুল কাটতে ২০ থেকে ৩০ টাকা ও শেভ করতে ১০ থেকে ২০ টাকা লাগে। সারাদিন কাজ শেষে একজন নাপিত পান ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা। এই টাকাতেই চলে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ। বছর শেষে আয় বলতে কিছুই থাকে না তাদের। ফলে একটি আধুনিক সেলুন তৈরি করতে পারছেন না তারা।
সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ফুটপাতে পিঁড়িতে বসে সামনে কাঠের টুল নিয়ে ২ জন নাপিত লোকজনের চুলদাড়ি কাটছেন। তাদের পাশেই কাঠের তৈরি একটি পিঁড়ির ওপর ছোট গামছায় চুল কাটা ও শেভ করার সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি রাখা আছে। বাগবের গ্রামের দুলাল মিয়া (৩৮) এক ব্যক্তিকে পিঁড়িতে বসিয়ে হাঁটুর কাছে মাথা নিয়ে চুল কাটছেন শমশের আলী সরদার (৬৫) নামের এক নাপিত। চুল-দাড়ি কাটার অপেক্ষায় বসে আছেন আরও কয়েকজন লোক- এমন দৃশ্য চোখে পড়ে পৌর  হাটে। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার হাটে পিঁড়ি নিয়ে বসেন নাপিতরা।
চুল দাড়ি কাটতে আসা ওবাইদুল এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি ছোট থেকেই এদের কাছ থেকে চুল দাড়ি কাটাই। আধুনিক সেলুনে শুধু শেভ করতে লাগে ৩০-৫০ টাকা আর চুল-দাড়িসহ ৭০ থেকে ৮০। এই সেলুনে শেভ করতে লাগে ১০ থেকে ২০ টাকা, চুল কাটাতে লাগে ২০ থেকে ৩০ টাকা। আমাদের পক্ষে অত টাকা দিয়ে আধুনিক সেলুনে চুল কাটানো ও সেভ করানো সম্ভব না। এখান থেকে কাটলে বেশি টাকা খরচ হয় না।
বড়িকান্দি গ্রামের চুল কাটাতে আসা সামছুল বলেন, চেয়ারে বসে চুল কাটালে লাগে ৫০ টাকা। আর এখানে লাগে ২০ টাকা। আমরা গরিব মানুষ। তাই এখানে ২০ টাকা দিয়ে চুল কাটাতে আসি। রোববার ও বুধবার হাটে নাপিতরা বসে। তবে এখানে যারা চুল দাড়ি কাটায় তাদের সবাই গরিব ও বৃদ্ধ মানুষ বলে তিনি জানান।
হাসনাপাড়া গ্রামের নাপিত শমশের আলী সরদার বলেন, আমি পিঁড়িতে বসিয়ে প্রায় ২৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। আগে এই পেশায়  যা আয় হতো তা দিয়ে ৩ ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে সংসার ভালোভাবে চলত, কিন্তু বর্তমানে চুল ও দাড়ি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে কেটেও সারাদিনে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব কিছুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। চুল ও দাড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক সেলুনগুলোতে এখন আর শাণ দেওয়া ক্ষুর নেই। এর বদলে এসেছে ব্লেড। এসেছে শেভিং ক্রিম, ফোম, উন্নতমানের লোশন। যখন আমরা এ কাজ শুরু করেছিলাম তখন এসব ছিল কল্পনার বাইরে। আধুনিক সেলুন দেওয়ার মতো এত টাকা হাতে নেই।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে সারিয়াকান্দি উপজেলায় হাট-বাজার, গ্রামগঞ্জের ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিত সম্প্রদায়ের পিঁড়ি বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাড়ি কাটার দৃশ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। 

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!