বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ রক্তশূন্যতায় (অ্যানিমিয়া) ভোগেন। এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক ঘাটতির লক্ষণ।
রক্তে হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থের স্বল্পতা দেখা দিলে শরীরে অক্সিজেন পরিবহণে ব্যাঘাত ঘটে এবং ধীরে ধীরে দেখা দেয় নানা উপসর্গ।
রক্তশূন্যতা কী?
মেডিকেল পরিভাষায় রক্তশূন্যতাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া। রক্তে হিমোগ্লোবিন বা লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে শরীর রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। হিমোগ্লোবিন হলো সেই প্রোটিন যা ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন ১৩ গ্রাম/ডেসিলিটারের কম, নারীদের ক্ষেত্রে ১২ গ্রাম/ডেসিলিটারের কম হলে রক্তশূন্যতা ধরা পড়ে। শিশু ও নবজাতকদের জন্য এই মাত্রা বয়সভেদে ভিন্ন।
রক্তশূন্যতার সাধারণ লক্ষণ
১. দুর্বলতা ও ক্লান্তি: স্বল্প পরিশ্রমেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
২. শ্বাসকষ্ট: হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি অক্সিজেন পরিবহণ কমিয়ে দেয়।
৩. হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া: হৃৎপিণ্ড অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করার চেষ্টা করে।
৪. ত্বক ফ্যাকাশে হওয়া: ত্বক, চোখের নিচে বা নখের নিচের অংশ বিবর্ণ হয়ে যায়।
৫. চুল ও নখের দুর্বলতা: অতিরিক্ত চুল পড়া, নখ ফেটে যাওয়া ও চুলের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া।
৬. ঠোঁটের কোণে ক্ষত, জিহ্বায় ঘা: বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিতে।
৭. হাত-পা ঠান্ডা থাকা: স্নায়ুবিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
৮. নারীদের মাসিক অনিয়ম: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ রক্তশূন্যতা বাড়াতে পারে।
৯. বিষণ্ণতা ও ক্ষুধামান্দ্য: রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতির ফলে মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে।
রক্তশূন্যতার কারণ
আয়রনের ঘাটতি: অপুষ্টি, রজঃস্রাবে অতিরিক্ত রক্তপাত, গর্ভধারণ ও স্তন্যদানকালীন আয়রনের চাহিদা বেড়ে যাওয়া।
ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি-১২ এর অভাব।
জন্মগত রোগ: থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া ইত্যাদি।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ: কিডনি, লিভার বা থাইরয়েডজনিত সমস্যা।
অভ্যন্তরীণ রক্তপাত: পেপটিক আলসার, কৃমি, পাইলস প্রভৃতি।
বংশানুক্রমিক প্রবণতা ও নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন।
রক্তশূন্যতার প্রতিকার ও করণীয়
১. সঠিক নির্ণয়: প্রথমেই হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে তীব্রতা নির্ধারণ করুন।
২. আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন- লাল মাংস, কলিজা, গিলা, ছোট মাছ, লালশাক, কচুশাক, সবুজ শাকসবজি, ডিম, দুধ, ফলমূল, বিশেষ করে আমলকি, লেবু।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন ও ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করুন।
৪. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের বিশেষ নজর দিতে হবে।
৫. বিশেষ কিছু রক্তশূন্যতায় আয়রন নিষিদ্ধও হতে পারে। তাই স্বেচ্ছায় ওষুধ না খেয়ে আগে পরামর্শ নিন।
রক্তশূন্যতা সাধারণ মনে হলেও এর পেছনে মারাত্মক রোগ লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই শরীরের ক্লান্তি বা দুর্বলতা অবহেলা না করে পরীক্ষা করান এবং সময়মতো ব্যবস্থা নিন। সুস্থ শরীরই সুন্দর জীবনের মূল চাবিকাঠি।
আপনার মতামত লিখুন :