অনেকেই ব্যস্ততা, ওজন কমানোর প্রচেষ্টা বা অভ্যাসগত কারণে সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট্ট ভুলটি আপনার শরীরে ডেকে আনতে পারে বড় ধরনের বিপদ?
সকালের নাস্তা শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়- এটি একটি দিনের সঠিক শুরুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর সকালে শরীর চায় পুষ্টি ও শক্তি। আর আপনি যদি এই সময় না খেয়ে দিন শুরু করেন, তাহলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য হারায়, হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
এতে ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে এমন কিছু সমস্যা, যেগুলো অজান্তেই আপনার দৈনন্দিন জীবন ও স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, নিয়মিত সকালের নাস্তা না করলে শরীরে যে ৫ ক্ষতি হতে পারে :
১. ওজন হ্রাস নয়, ওজন বাড়ে!
সকালের নাস্তা বাদ দিলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। কারণ, নাস্তা না করলে শরীরে ঘ্রেলিন (ghrelin) নামক হরমোনের প্রভাব বেড়ে যায়, যা ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে। ফলে পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত খাওয়া হয়-বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস ও ফাস্টফুড। এর ফলে শরীরে জমে যায় অতিরিক্ত ক্যালোরি ও চর্বি।
গবেষণা বলছে যেসব মানুষ নিয়মিত সকালের নাস্তা করেন না, তাদের মধ্যে স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।
২. চুল পড়া ও চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়া
সকালের নাস্তা না করলে শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (যেমন: আয়রন, ভিটামিন বি, জিংক) পায় না, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন প্রোটিন ঘাটতির ফলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল পড়ার হার বাড়ে।
বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে প্রোটিন ডেফিসিয়েন্সি থেকেই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)-এর সাথে চুল পড়ে যাওয়ার সম্পর্কও দেখা যায়।
৩. মাইগ্রেনের তীব্রতা বাড়ে
খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে ব্রেন সিগন্যালিং ব্যাহত হয়। যাদের মাইগ্রেন আছে, তারা এটি খুব দ্রুত অনুভব করেন। সকালের নাস্তা না করলে মাথাব্যথা, চোখ ঝাপসা, ঘাড়-কাঁধে টান, ক্লান্তি ইত্যাদি উপসর্গ বাড়ে।
মেডিকেল ফ্যাক্ট: হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) মাইগ্রেন ট্রিগার করে। তাই সঠিক সময়ে হালকা-সুষম নাস্তা গুরুত্বপূর্ণ।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
নাস্তা না করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ভাল কোলেস্টেরল (HDL) কমে যায়। এটি ধমনিতে চর্বি জমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
গবেষণা থেকে জানা যায়: যেসব ব্যক্তি নিয়মিত নাস্তা করেন না, তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ২৫% বেশি।
৫. ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে
নিয়মিত নাস্তা না করলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এতে স্থূলতা বা ওবেসিটি দেখা দেয়। আর স্থূলতা অনেক ক্যান্সারের (যেমন: কোলন, স্তন, জরায়ু) ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, স্থূলতা বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারের দ্বিতীয় বৃহৎ কারণ হয়ে উঠছে।
কালের নাস্তা কেমন হওয়া উচিত?
প্রোটিন: ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল
জটিল শর্করা (Complex carbs): ওটস, লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড
ফাইবার: ফলমূল, সবজি
সুস্থ চর্বি: অলিভ অয়েল, চিয়া সিডস, বাদাম
নাস্তা হতে হবে সুষম ও পরিমাণে পরিমিত, যেন সারাদিন স্থির শক্তি পাওয়া যায়।
সকালের নাস্তা শুধু একটি খাবার নয়- এটি আপনার দিনকে সুস্থভাবে শুরু করার প্রথম ধাপ। নাস্তা না করার অভ্যাস শরীরে যেমন তাৎক্ষণিক সমস্যা তৈরি করে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে তা হতে পারে নানান জটিল রোগের কারণ। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা করতে হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন