ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

দাঁতের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
দাঁতের ব্যথার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার। ছবি - সংগৃহীত

শীতের আগমনের আগে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন দাঁতের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা ও ব্যথার কারণে। শীতে ঠান্ডায় ঠোঁট ও গালের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে দাঁতের চোয়ালের সংক্রমণ, ক্ষয়, মাড়ির প্রদাহ বা গুরুতর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান যেমন লবঙ্গ তেল, লবণ পানি থেকে রসুন, বরফ ব্যবহার করে বাড়ির শীতেই উপশম খুঁজে পাওয়া সম্ভব। চলুন, ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো বিস্তারিতভাবে জানি।

কেন শীতে দাঁতের ব্যথা বেশি?

১. গলার রক্তনালীর সংকোচন : ঠান্ডার সময় ঠোঁট ও গালের উপরের অংশে রক্ত চলাচল কমে যায়, ফলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

২. শুকনো ঠোঁট ও মাড়ির আক্রমণ : ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁট ও গাল শুষ্ক হয়ে ফাঁটে, যা মুখে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি করে।

৩. দাঁতের এনামেল নষ্ট হওয়া : শীতের টেম্পারেচার ওঠানামা এবং গরম-ঠান্ডা পানির ব্যবহার দিয়ে দাঁতের এনামেল দুর্বল হতে পারে, যার ফলে ঠান্ডায় বাড়তে থাকে অবস্থার সংবেদনশীলতা।

৪. মাড়ির সমস্যা : শীতের সময় মাড়ির রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, ফলে গলা ও মাড়িতে প্রদাহ বা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

দাঁতের ব্যথার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার

লবঙ্গ তেল : দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকর প্রতিকারগুলোর মধ্যে একটি হলো লবঙ্গ তেল। লবঙ্গে রয়েছে ইউজেনল, যা একটি প্রাকৃতিক চেতনানাশক এবং একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা ব্যথা এবং প্রদাহ কমানোর প্রবণতা রাখে। লবঙ্গ তেল ব্যবহারের পাশাপাশি লবঙ্গ চিবিয়ে খেলেও এক্ষেত্রে উপকার পেতে পারেন।

লবণ পানিতে গার্গল : দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা এবং সংক্রমণ কমাতে একটি সহজ এবং কার্যকরী প্রতিকার হলো লবণ পানিতে গার্গল করা। লবণ একটি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক। এটি মুখের প্রদাহ, ফোলাভাব এবং ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। ৩০ সেকেন্ডের জন্য এটি মুখে নিয়ে গার্গল করুন। এভাবে কয়েকবার করুন। এতে আরাম পাবেন।

রসুন : আমাদের রান্নাঘরের পরিচিত উপকরণ রসুন। এটি নানা ধরনের ভেষজ ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। অ্যালিসিন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আনতে কাজ করে। রসুন ব্যথা কমায় এবং মৌখিক গহ্বরের ধ্বংসাত্মক অণুজীবকে মেরে ফেলে। রসুনের কয়েকটি কোয়া পেস্ট করে নিয়ে সরাসরি দাঁতে লাগান। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আইস প্যাক : ঠান্ডা প্রয়োগ প্রদাহ কমানোর কার্যকর উপায়। একটি পরিষ্কার কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে কিছু বরফের টুকরো মুড়ে নিন। এটি ১৫ মিনিটের জন্য ব্যথাযুক্ত দাঁতের কাছে গালের ওপর ধরে রাখুন। মাঝে মাঝে সরিয়ে নিয়ে আবার ধরুন। এটি নির্দিষ্ট দাঁতের মধ্যে রক্তনালীকে সংকুচিত করে, যার ফলে ব্যথা উপশম হয় বা ফোলাভাব হ্রাস পায়। এটি দাঁতের ব্যথার জন্য খুব দ্রুত প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।

সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ

ব্যথা ২৪-৪৮ ঘণ্টায় না কমলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন।
গর্ভবতী বা শিশুদের ক্ষেত্রে বাড়ির প্রতিকার ব্যবহারে সতর্কতা দরকার।
ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশনের রোগীদের লবণ ও মধু ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
রসুন বা লবঙ্গ সরাসরি দীর্ঘক্ষণ রাখলে মুখের আবরণ ব্যথা বাড়তে পারে।
গাজানো প্যাক বা খুব ঠান্ডা ব্যবহার করা উচিত নয়, বরং হালকা বরফই উপযোগী।

কবে ডেন্টিস্টের কাছে যাবেন?

ব্যথা ৩-৪ দিনেও থেকে গেলে
ফোলাভাব বা পুঁজ হতে দেখা গেলে
জ্বর, মাথা ঘোরা বা চোখে এলার্জি দেখা দিলে
দাঁতের গিঁটে গোলাপি, কালাভ বা ফোস্কা বের হলে

শীতের আগমণ বুঝিয়ে দেয় দাঁতের সমস্যা শুরু হওয়ার প্রস্তুতি। তবে, লবঙ্গ তেল, লবণ পানি, রসুন, বরফ এবং ঘরোয়া উপায় মানেই দ্রুত আরাম যদি সেটা হালকা অবস্থা হয়। তবে সংক্রমণ বা গভীর ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য অবশ্যই নিন।

সতর্কতা ও নিয়মিত দাঁত-মাড়ির পরিচর্যা করুন এতে শীতেও সুস্থ থাকবে আপনার মুখ ও হৃদয়!