রাতের নিস্তব্ধ আকাশ হঠাৎ আলোয় ভরে উঠেছে। সুরের তালে তালে নাচতে শুরু করেছে শতাধিক ড্রোন, আর সেগুলোর সমন্বয়ে আকাশজুড়ে তৈরি হয়েছে এক জীবন্ত ক্যানভাস। এই ক্যানভাসই ‘ড্রোন লাইট শো’ নামে পরিচিত।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে ঘিরে এবার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই ড্রোন শোর মাধ্যমে। সংসদ ভবনের আকাশে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। চীন থেকে আগত বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে মাত্র দুই মিনিটের এই শো মুগ্ধ করেছে লাখো দর্শক।
কিন্তু কখনো কি ভেবেছ, এতগুলো ড্রোন একসঙ্গে এমন নিখুঁতভাবে কীভাবে কাজ করে? চলো এবার সেটাই জানা যাক।
ড্রোন লাইট শো কী?
ড্রোন লাইট শো হচ্ছে বহু সংখ্যক ছোট আকারের ড্রোন, যেগুলো কম্পিউটারের সাহায্যে একযোগে আকাশে উড়ে বিভিন্ন ছবি ও আকৃতির বিন্যাস তৈরি করে। প্রতিটি ড্রোনে থাকে একটি করে আলো, আর পূর্বনির্ধারিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দাঁড়ালেই আকাশে ভেসে ওঠে অবাক করা সব দৃশ্য।
কোথা থেকে এলো এই প্রযুক্তি?
শুরুর দিকে ড্রোন শো ছিল গবেষণাগারের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার একটি ভিডিওতে প্রথম ব্যাপকভাবে পরিচিত হয় ড্রোন শো। এরপর ইউরোপীয় প্রযুক্তিবিদদের পাশাপাশি প্রযুক্তি জায়ান্ট ‘ইন্টেল’ এই শোগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় করে তোলে। এমনকি অলিম্পিক গেমসের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টেও স্থান পেয়েছে ড্রোন শো।
ড্রোন শো কীভাবে কাজ করে?
এই শোগুলোর নেপথ্যে কাজ করে অত্যন্ত জটিল সফটওয়্যার ও নিখুঁত পরিকল্পনা। প্রথমে ডিজাইনাররা নির্ধারণ করেন, কী কী দৃশ্য তুলে ধরা হবে। এরপর ড্রোনগুলোর উড়ার পথ, উচ্চতা, সময়, এমনকি গানের সঙ্গে দৃশ্যের সমন্বয়—সবকিছুই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে। শোয়ের দিন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে একযোগে নির্দেশনা পেয়ে ড্রোনগুলো নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে যায় এবং তৈরি হয় সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
আতশবাজির জায়গা দখল করবে ড্রোন?
অনেকেই মনে করেন, ভবিষ্যতে ড্রোন শো আতশবাজির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। কারণ ড্রোন শো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত, শব্দবিহীন এবং পরিবেশবান্ধব। বাজির মতো ধোঁয়া কিংবা শব্দদূষণ হয় না, যা মানুষ ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। উপরন্তু, ড্রোন দিয়ে যে সৃজনশীল দৃশ্য তুলে ধরা যায়, তা আতশবাজির মাধ্যমে সম্ভব নয়। যেমন—আকাশজুড়ে সাকিব আল হাসান বা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি তুলে ধরা যায় কেবল ড্রোনের মাধ্যমেই।
তাহলে বেশি ড্রোন শো দেখা যায় না কেন?
এই আয়োজনটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তিনির্ভর। একটি ড্রোন শো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় দক্ষ পাইলট, উন্নতমানের সফটওয়্যার, নিরাপদ স্থান এবং সরকারি অনুমতির। এছাড়া বিশেষ ধরনের শক্তিশালী ড্রোনও দরকার, যা নির্ধারিত স্থানে স্থির থাকতে পারে। এসব কারণেই এখনো ড্রোন শো ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি।
একটি ড্রোন শোতে কত ড্রোন লাগে?
দৃশ্যের জটিলতার ওপর নির্ভর করে একটি শোতে ৫০ থেকে ২০০০টি পর্যন্ত ড্রোন ব্যবহার করা হতে পারে। ইন্টেল এখন পর্যন্ত একসঙ্গে ২,০৬৬টি ড্রোন উড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছে। তবে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক ড্রোন দিয়েও অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব।
খরচ কত?
ছোট আকারের ড্রোন শোতে (৫০টি ড্রোন) খরচ হতে পারে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। আর বড় আকারের শোতে হাজার খানেক ড্রোন ব্যবহার করলে খরচ চলে যায় কয়েক কোটি টাকায়। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে—এত টাকা খরচ করে আতশবাজির বদলে ড্রোন শো কি আদৌ সম্ভব?
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই খরচ কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উন্নত সফটওয়্যার, বেশি দক্ষ জনবল এবং আধুনিক ড্রোনের ব্যবহার—সব মিলিয়ে আগামীতে ড্রোন লাইট শো হবে আরও সহজলভ্য এবং বিস্ময়কর।
বাংলা নববর্ষে সংসদ ভবনের আকাশে এমন একটি প্রযুক্তিনির্ভর আয়োজন নিঃসন্দেহে নতুন যুগের সূচনা করেছে। ভবিষ্যতে হয়তো এটাই হয়ে উঠবে উৎসবের নতুন আলোকছটা।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন