বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। উন্নত এআইভিত্তিক চ্যাটবট ও অটোমেশন ব্যবস্থার কারণে বহু খাতে মানুষের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন এবং আরও অনেকে ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। বিশেষ করে যেসব পেশা শ্রমনির্ভর বা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ওপর নির্ভরশীল, সেসব ক্ষেত্রে চাকরির নিরাপত্তা এখন প্রশ্নের মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘জেনারেটিভ এআই’র দ্রুত উন্নয়নের ফলে বিশেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা চাপে রয়েছেন।
যদি তারা নতুন প্রযুক্তি যেমন ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা রিট্রিভাল অগমেন্টেড জেনারেশন (আরএজি)-এর দক্ষতা অর্জন না করেন, তবে আগামী দিনে প্রায় ৮০ শতাংশ সফটওয়্যার প্রকৌশলী কাজ হারাতে পারেন।
অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ার করেছেন যে, এআই ব্যবহারের ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই করপোরেট পর্যায়ের কর্মী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। তার ভাষায়, ‘এআই দক্ষতা বাড়ালেও এর কারণে কোম্পানিগুলো কর্মী কমিয়ে আনার সুযোগ পাবে।’
এদিকে, মাইক্রোসফট চলতি বছর আবারও বড় আকারের ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে, যা মোট কর্মীর প্রায় ৪ শতাংশ। এর আগেও তারা চার ধাপে ছাঁটাই করেছে, যার মধ্যে মে মাসে ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই উল্লেখযোগ্য।
এআইয়ের প্রভাব নিয়ে অ্যানথ্রোপিক নামের এআই স্টার্টআপের প্রধান দারিও আমোডেই বলেন, অফিসের সাধারণ স্তরের অর্ধেকের বেশি চাকরি ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে। শুধু উচ্চপর্যায়ের নয়, প্রাথমিক পর্যায়ের কর্মীরাও বড় ঝুঁকিতে আছেন।
একই সুরে কথা বলেছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এআই ইতিমধ্যেই চাকরির বাজারে বড় ধাক্কা দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, উন্নত দেশের ৬০ শতাংশ চাকরি এআই দ্বারা প্রভাবিত হবে। বৈশ্বিকভাবে চাকরির ৪০ শতাংশ এআইর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া বৈষম্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে এই চিত্রকে পুরোপুরি নেতিবাচক মনে করেন না বিল গেটস। তার মতে, ইতিহাসে প্রতিটি নতুন প্রযুক্তির আগমনে প্রথমে ভয় দেখা দিলেও পরবর্তীতে সেটাই নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এআইও তার ব্যতিক্রম নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন বহুমাত্রিক দক্ষতা। কেবল কোডিং নয়, এআই-সংক্রান্ত যেকোনো কাজে সফল হতে হলে গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার সায়েন্সের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের সমন্বিত জ্ঞান জরুরি। কারণ আধুনিক বিশ্বের সমস্যাগুলো জটিল এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজন ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ।