ভিডিও, পডকাস্ট কিংবা অডিওবুক—অনলাইন কনটেন্ট এখন অনেকেই দ্রুতগতিতে শুনে বা টেনে টেনে দেখে থাকেন। সময় বাঁচাতে বা দ্রুত শেখার লক্ষ্যে তরুণদের মধ্যে এই অভ্যাস দিন দিন বাড়ছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এই অভ্যাস মস্তিষ্কের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
ক্যালিফোর্নিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৯% শিক্ষার্থী অনলাইন লেকচারের গতিতে হেরফের করেন। ১.২৫x, ১.৫x এমনকি ২x গতি—এসব এখন বেশ পরিচিত।
এই অভ্যাসের কিছু স্পষ্ট সুবিধা রয়েছে- সময় সাশ্রয়, একই ভিডিও বারবার দেখে ভালোভাবে বোঝা, মনোযোগ ধরে রাখার সুবিধা, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অনেক কাজে লাগতে পারে। তবে গবেষণা বলছে, এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।
মানুষ সাধারণভাবে প্রতি মিনিটে প্রায় ১৫০টি শব্দ বুঝে নিতে পারে। গতি বেড়ে ৩০০–৪৫০ শব্দে পৌঁছালে বোঝার ক্ষমতা ব্যাহত হয়।
গবেষণা অনুযায়ী, নতুন তথ্য প্রথমে মস্তিষ্কের ওয়ার্কিং মেমোরিতে জমা হয়। এ অংশের ধারণক্ষমতা সীমিত। খুব দ্রুত তথ্য এলে মস্তিষ্কে মানসিক চাপ তৈরি হয় এবং কিছু তথ্য হারিয়ে যেতে পারে।
কী বলছে গবেষণা?
‘কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন’-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এক মেটা-অ্যানালাইসিসে ২৪টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন গতিতে (১x, ১.২৫x, ১.৫x, ২x, ২.৫x) ভিডিও দেখিয়ে শেখার ফলাফল পরিমাপ করা হয়।
ফলাফল:
১.৫x গতিতে দেখা শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সে সামান্য (≈২%) প্রভাব পড়ে।
২x বা তার বেশি গতি ব্যবহারে শেখার মানে মাঝারি থেকে বড় ধরনের ক্ষতি হয়।
যেমন: গড় নম্বর ৭৫% → ৫৮% এ নেমে আসতে পারে।
বয়স্কদের জন্য বেশি ঝুঁকি
৬১ থেকে ৯৪ বছর বয়সীদের নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, তারা দ্রুতগতির ভিডিও দেখার সময় তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। বয়সজনিত কারণে মস্তিষ্কের তথ্য ধারণক্ষমতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এটি হতে পারে।
গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন—এই অভ্যাস স্মৃতিশক্তি বা মনোসংযোগে দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলে এবং তরুণরা অভ্যস্ত হয়ে গেলে ক্ষতি কমে আসতে পারে কি না।
অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে কি মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, না কি এটি মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ায় সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যদিও ১.৫x গতিতে দেখা শেখায় খুব ক্ষতি করে না, তবে এটি শেখার অভিজ্ঞতাকে কম আনন্দদায়ক করে তুলতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদে শেখার আগ্রহ কমে যেতে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দ্রুত ভিডিও দেখে সময় সাশ্রয় করা সম্ভব হলেও শেখার মান ও অভিজ্ঞতা সবসময় একই থাকে না। সঠিক ভারসাম্য রেখে ভিডিও দেখার অভ্যাস গড়ে তুললে মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে শেখার মান উন্নত রাখা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :