জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় এসেছে। এতে নিবন্ধন ফেরত দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে জামায়াতের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের বিষয়টিও বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। পরে রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। আদেশের অনুলিপি ইসিতে পাঠানোও হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী শিশির মনির।
ফেসবুক এক পোস্টে আইনজীবী শিশির মনির লিখেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত আদেশ অনুযায়ী, জামায়াতের নিবন্ধন এবং দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বহাল।’
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে ২০০৯ সালে তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া ইসির নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ওই রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দলটি। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
পরে লিভ টু আপিল করে জামায়াত। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল আবেদন করে জামায়াত।
এদিকে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) একটি চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেয়।
এরমধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে ২৮৬ দিন বিলম্ব মার্জনা করে আপিল এবং ২৯৪ দিন বিলম্ব মার্জনা করে লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। পরে গত ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।
এরপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গতবছরের ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ১৪ মে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করে সর্বোচ্চ আদালত।
আপনার মতামত লিখুন :