রাজধানীর চানখারপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় স্টেট ডিফেন্সের জেরার সময় অজয় কুমার বলেন, ‘আমাকে গুলি করার আদেশ দেওয়ার পরও গুলি করিনি। কারণ ছাত্র-জনতা নিরস্ত্র ছিল। আমি জানতাম, আমার চাইনিজ রাইফেলের প্রত্যেকটি গুলি একটি করে প্রাণ নিতে পারে। এ জন্যই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পাওয়ার পরও গুলি করিনি।’
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ১৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এ দিন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে অজয় কুমারের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
এ মামলায় পলাতক চার আসামির পক্ষে সাক্ষী অজয় কুমারকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আহমেদ।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহসহ প্রসিকিউশন টিমের অন্যরা।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ট্রাইব্যুনালে চানখারপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই ছাত্র-জনতার ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে পুলিশ। আজ সাক্ষ্য দেওয়া পুলিশ সদস্যের নামেও একটি চাইনিজ রাইফেল ও ৪০টি গুলি ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে চাননি। এ কারণে তাকে গালাগালিসহ চাকরির ভয় দেখান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপরও তিনি গুলি করেননি।
তিনি বলেন, এই সাক্ষীর কাছ থেকে চাইনিজ রাইফেল কেড়ে নিয়ে সুজন নামে একজন কনস্টেবলের হাতে দেন ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আর সুজনের হাতে থাকা লাঠি ও ঢাল এনে এই সাক্ষীর হাতে দেওয়া হয়। পরে সুজন-নাসিরুলরা ছাত্র-জনতার ওপর চায়নিজ রাইফেলে নির্বিচারে গুলি করেন। সেখানে ছয় জন ছাত্র নিহত হন। ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এই সাক্ষী। এ ছাড়া গুলি করার আদেশ দেওয়ার পরও গুলি করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন সকালে কারাগার থেকে এ মামলার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন: শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন: সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।