বর্তমান সময়ে আমরা প্রায় সবাই কমবেশি মানসিক চাপে ভুগি। পারিবারিক দায়িত্ব, কর্মক্ষেত্রের চাপ, সম্পর্কের টানাপড়েন কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এইসব মিলেই প্রতিদিন মনের ওপর তৈরি হয় একটা ভার। আর এই মানসিক চাপ ধীরে ধীরে জন্ম দেয় হতাশার, উদ্বেগের, এমনকি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার মতো সমস্যার।
একসময় যে মানুষটি প্রাণবন্ত ছিল, হাসিখুশি ছিল, সে-ই হঠাৎ করে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, চুপ করে যায়। কিন্তু সমস্যাটা সেখানে নয় সমস্যা হয় তখনই, যখন আমরা সেটা বুঝেও কোন ব্যবস্থা নেয় না।
যদি আমরা মানসিক চাপের শুরুতেই সচেতন হই, নিজেদের যত্ন নিতে শিখি। তাহলে অনেক বড় বিপর্যয় এড়ানো যায়। ঠিক সেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েই আজকের এই আলোচনা কীভাবে মানসিক বিপর্যয়ের আগেই নিজেকে সুরক্ষা দেওয়া যায়, আর যদি সেটা ঘটে, তাহলে কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যায়।
১. নিজের অনুভূতি স্বীকার করুন
মানসিক বিপর্যয় কোনো লজ্জার বিষয় নয়। এটা জীবনেরই একটি অধ্যায়। তাই প্রথম ধাপ হলো নিজেকে বোঝা এবং মানা, ‘হ্যাঁ, আমি আজ ভালো নেই।’
নিজের আবেগকে স্বীকার করুন, সেটা লুকাতে যাবেন না। এই স্বীকৃতি আপনাকে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার প্রথম প্রথম ধাপে নিয়ে যাবে।
২. মন খুলে কথা বলুন
মনের কষ্ট যদি মুখে না আসে, তা হৃদয়ে গেঁথে যায়। বিশ্বাসযোগ্য ও সহানুভূতিশীল কারো সঙ্গে কথা বলুন বন্ধু, পরিবার কিংবা থেরাপিস্ট। নিজের অনুভব ভাগ করে নেওয়া মানেই একধাপ হালকা হওয়া।
যদি কাউকে খুঁজে না পান, ডায়েরি লিখুন বা ভয়েস নোট রেকর্ড করুন। নিজের ভেতরের কথাগুলো বাইরের জগতে প্রকাশ পেতে দিন।
৩. শরীরকে সক্রিয় রাখুন, মন নিজেই সাড়া দেবে
চাপের সময়ে আমাদের শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে। অথচ বিজ্ঞান বলছে শরীর চললেই মন সচল হয়। এজন্য আপনাকে নিয়মিত কিছু কার্যক্রম পরিচলনা করতে হবে। যেমন- সকালে ২০ মিনিট হাঁটা। হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করা। সময়মতো খাবার খাওয়া এবং পানি গ্রহণ। শরীরকে ভালো রাখলে মনও ধীরে ধীরে ভারমুক্ত হয়।
৪. ঠিকমতো ঘুমান
বিষণ্ণতার কারণে অনেকেই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না বা ঘুমান না। তবে এটা ঠিক নয়, ঘুম আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম আপনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
৫. কিছু সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকুন
অন্যের “সুখের ছবির” ভিড়ে নিজের জীবনকে আরও অন্ধকার মনে হতে পারে। তাই দিনে অন্তত কিছু সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকুন। এই সময়টা নিজের সঙ্গে কাটান, বই পড়ুন, গাছের কাছে যান বা নীরবতার সঙ্গ উপভোগ করুন।
৬. মন শান্ত করতে প্রার্থনা বা ধ্যান করুন
হতাশা যখন ভেতরটা খালি করে দেয়, তখন অনেকেই খুঁজে ফেরেন আত্মিক প্রশান্তি। এই জায়গায় ধর্মীয় অনুশীলন, প্রার্থনা বা ধ্যান বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে। বিশ্বাস ও আত্মিক শান্তি অনেক সময় ভেতরের কষ্ট কমিয়ে দেয়। মনে প্রশান্তি আসে, আশা জাগে।
৭.ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন এবং তা পূরণে কাজ করুন
জীবনে সবসময় বড় কিছু করতে হবে সব সময় এমনটা ভাবা ঠিক না। কেননা যখন সব কিছু অস্থির লাগে, তখন বড় কিছু নয় একটা ছোট সফলতা মনকে অনেক বড় আনন্দ দিতে পারে। তাই খুব ছোট একটা লক্ষ্য ঠিক করুন। যেমন- সকালে বিছানা গুছিয়ে ফেলা। সকালে উঠে হাঁটতে যাওয়া বা বই পড়া। একটি প্রিয় খাবার রান্না করা। নতুন কিছু শেখা ।প্রতিদিন একটি ক্ষুদ্র কাজও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে।
৮. গান শুনুন
মনকে প্রশান্ত করার খুব দারুণ একটা পদ্ধতি গান শোনা। নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী প্রিয় গান শুনুন। মাঝে মধ্যে আপনিও গুনগুন করে উঠুন। অনেকটাই প্রশান্তি আসবে মনে। নিজের বিশ্বাস, সাহিত্য, কবিতা কিংবা কোনো প্রিয় গান সবই হতে পারে আত্মাকে জাগিয়ে তোলার খোরাক।
৯.নিজের পছন্দের কাজ করুন
যে কাজটা করলে আপনার ভালো লাগে। যেমন ছবি আঁকা, গান শোনা, গাছের যত্ন নেওয়া, রান্না করা বা ডায়েরি লেখা সেই কাজটায় সময় দিন। এই ছোট ছোট আনন্দের কাজগুলো আপনার মনকে ধীরে ধীরে শান্ত ও ভালো করে তুলবে।
১০. খুব কষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নিন
যদি দেখেন, আর কিছুতেই ভালো লাগছে না, ঘুম আসছে না, বা মাথায় খারাপ চিন্তা আসছে, তাহলে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে যান। এটা কোনো দুর্বলতা নয় বরং নিজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।
যতই বড় কষ্ট হোক, সেটা চিরস্থায়ী নয়। নিজেকে ধৈর্য ধরতে দিন, ভালোবাসুন, আর সময় দিন। ধীরে ধীরে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস রাখুন, একসময় আপনি আবার আগের মতো হাসতে পারবেন, আনন্দ ফিরে পাবেন।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন