রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারের খোঁজ নেয়নি কেউ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারের খোঁজ নেয়নি কেউ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের রিপন (৩৬) গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা নগর এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় (৭ আগস্ট) তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত রিপন ছিলেন পেশায় একজন রিকশাচালক। বর্তমানে কর্ণফুলীতে তাঁর পরিবার। পরিবারের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত রিপনের দুই অবুঝ দুই সন্তান ও পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়নি কেউ।

সম্প্রতি, চট্টগ্রামের জেলার কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের আমির হোসেন মাস্টার বাড়ি (৫নং ওয়ার্ড) গ্রামে গিয়ে রিপনের স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। খুব অবাক করা বিষয় হলো-গত ২ মাস ১৩ দিনেও তাঁদের কোন খবর নেয়নি প্রশাসন। পায়নি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতাও। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। রিপনের বাসার দরজায় কেউ কড়া নাড়লেই বড় মেয়ে ১৩ বছরের উর্মি ও সাড়ে পাঁচ বছরের ছেলে রফিকুল ইসলাম তুহিন মনে করে তাঁদের বাবা ফিরে এসেছেন। বাবা রিপন আর আসবে না জেনেও অবুঝ দুই শিশুকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন মা শামীমা আক্তার রুমা (৩৬)। এভাবেই অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে দিন কাটছে তাঁর। গত দুই মাস যাবত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সাহায্য চেয়ে আবেদন করলেও এখনো কোন সাহায্য মিলেনি তাঁদের। এমনটি তথ্য মিলে। অথচ হতদরিদ্র পরিবারটির একমাত্র সম্বল ছিলেন চালক রিপন। ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ যোগাতেন। অভাবের সংসারে রিপনের মৃত্যু যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাত। কেনোনা, দুই সন্তানের মধ্যে তাঁর ছোট ছেলে গলার সমস্যাজনিত রোগে কথা বলতে পারেন না। এখন চিকিৎসাও বন্ধ। বড় মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে না পেরে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ। ভাড়া বাসায় তাঁদের বসবাস। রিপনের অকাল মৃত্যুতে বাসা ভাড়া পরিশোধ করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সংসারের হাল ধরতে ছোট বাচ্চাকে ঘরে রেখে রিপনের স্ত্রী গার্মেন্টসে চাকরি নেন।

রিপনের পরিবার ও জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদন সূত্রে জানা যায়, রিপনের স্থায়ী ঠিকানা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার সাত্তার ভুঁইয়া বাড়ি হলেও তাঁর পরিচয়পত্রে ঠিকানা মিলে নগরীর বন্দর থানাধীন পশ্চিম গোসাইল ডাঙ্গার আকবর এর ভাড়াঘর। তাঁর পিতার নাম মো. ইদ্রিস, মাতা সুফিয়া বেগম। যদিও রিপন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর সদরঘাট এলাকায় রিকশা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

গত ৫ আগস্ট সকাল ১০ টার দিকে সদরঘাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলনে দেশের আপামর জনতা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আন্দোলন অংশগহণ করেন।

ওই দিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লাঠি, হকিস্টিক, কিরিচ ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে এতে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে রুমার স্বামী রিপন মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হয়। আহত অবস্থায় রাস্তার পড়ে ছিলো। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য পাশে থাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সেদিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভর্তি করানো হয়।

পরে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত ৭ আগস্ট রাত ৭ টা ৪০ মিনিটের সময় তাঁর মৃত্যু হয়। গত ২৮ আগস্ট এ বিষয়ে ঢাকার কোতোয়ালী থানায় মামলার এজাহার দায়ের করেন। যার কোতোয়ালী থানা মামলা নং-১১।

জানতে চাইলে রিপনের স্ত্রী শামীমা আক্তার রুমা বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেটি প্রতিবন্ধী। আমার স্বামীর অবর্তমানে পরিবারের অন্য কোন আর্থিক সম্বল নেই। সুতরাং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক, ছাত্র সমন্বয়ক, প্রশাসনসহ এলাকার সামর্থ্যবানদের সহায়তা চাই। পরিবারের নিরাপত্তা চাই।’

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. গিয়াস উদ্দিন ফয়সাল বলেন, ‘কর্ণফুলীর রিপনের মতো যাঁদের রক্তে নতুন বাংলাদেশ রচিত হলো তাঁদের শোকাহত পরিবারকে অভাবে হতদরিদ্র অবস্থায় রেখে বিজয় উল্লাস করা খুবই কষ্টের। আমি কর্ণফুলীর সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা রিপনের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তাঁর পরিবারের সম্মান ও আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি মো. এনামুল হক বলেন, ‘রিপন ঢাকায় রিকশা চালাতেন। গত ৫ আগস্ট সে আন্দোলনে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়ে আহত হন। পরে ছাত্ররা তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পাশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানে দুই দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়।’

সমন্বয়ক এনামুল হক আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে রিপনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। ঘটনাটি সত্য। তবে পরিবারে যোগাযোগ করার মতো কেউ না থাকায় ঘটনাটি কিছুটা চাপা পড়ে। তবে আমরা চেষ্টা করতেছি শিগগিরই শহীদ রিপনের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করার।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক সিনিয়র চিকিৎসক রিপনের সমস্ত কাগজপত্র দেখে জানান, ‘ধারালো কিছু দিয়ে রিপনের ঘাড়ে আঘাত করায় রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয় বলে ডেড সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে। মনে হচ্ছে তিনি কার্ডিয়াক আউটপুট রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে পারেননি। বেশি পরিমাণে রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ায় কার্ডিওপালমোনারি হার্ট ফেইলিউরে তাঁর মৃত্যু হয়।’

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ফোনে ক্ষুদে বার্তা আর হোয়াটসঅ্যাপে নিহত রিপনের সমস্ত ডকুমেন্টস পাঠালেও সিন করে কোন ধরনের মন্তব্য করেননি। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য উপাত্ত প্রেরণ করা হয়।

নিহত রিপনের স্ত্রী শামীমা আক্তার রুমা বলেন, ‘মাস খানিক আগে আমি কর্ণফুলী ইউএনও ম্যাডামের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সব কিছু দেখে জানান ভোটার এলাকা কর্ণফুলীর বাহিরে। সুতরাং করার কিছু নেই বলে জানিয়ে দেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!