দেশের প্রযুক্তিখাতে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে আয়োজিত ‘আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ সিজন-২ এর ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয় রোববার (২৪ মে)।
ঢাকার 'বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)' ক্যাম্পাসে। সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাছাইকৃত ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত ২৯০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। দিনব্যাপী এ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় লিখিত, ব্যবহারিক এবং ভাইভা পরীক্ষা।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হলো-তরুণ সমাজকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলা, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবনী শক্তি জাগ্রত করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে তোলা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম শাখাওয়াত আলী, যিনি তরুণদের মধ্যে আইসিটির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন আইসিটি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও জুরি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞগণ।
চূড়ান্ত রাউন্ড শেষে বিজয়ী ৩৯ জন প্রতিযোগীর মধ্যে পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, স্বাস্থ্য বীমা, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, ট্রফি, মেডেল ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রস্তুত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে তৈরি করা। এই অলিম্পিয়াড শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি প্ল্যাটফর্ম যা তরুণদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান নিপু বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।
প্রোগ্রামের কো-কনভেনর গোলাম সারোয়ার বলেন, আইসিটি অলিম্পিয়াড কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি মিশন—যার মাধ্যমে আমরা তরুণদের প্রযুক্তি-দক্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলতে কাজ করছি। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়তে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে, আর আমরা সেই পথ তৈরিতে সহায়তা করছি।
চিফ টেকনোলজি অফিসার মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে একদল আইসিটি শিক্ষাবিদ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সারাদিনব্যাপী অনলাইন, অফলাইন এবং সরাসরি ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে ৩৯ জন বিজয়ী নির্বাচন করেন।
ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউটিটিএস) এর পরিচালক এবং চিফ জুরি বোর্ড সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. সাফায়েত হোসেন, স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্পের প্রেসিডেন্ট এবং নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বিডি-এর উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু, এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মো. তাহজিবুল ইসলামের নেতৃত্বে বিজয়ীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
এ ছাড়াও বেস্ট কনভেনর হিসেবে মো. শামীম আখতার শিমুল এবং বেস্ট আইসিটি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে আইসিটি শিক্ষক একেএম আহসান ফরিদ এবং দাঁড়কাক-এর সিইও নওরীন হক রিদিকে সম্মাননা সূচক পুরস্কার প্রদান করা হয়।
বিজয়ীদের চূড়ান্ত তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয় আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের সম্মানিত উপদেষ্টা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইংলিশ অলিম্পিয়াড ফাউন্ডারের প্রতিষ্ঠাতা আমান সুলেমান এবং কোয়ান্টাম সেইফ বাংলাদেশের সিইও ও প্রযুক্তি খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব মুজতবা সত্তার অনন্তের হাতে। এই আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে মঞ্চে আসেন মেন্টর কনভেনর, শিল্পখাতের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞবৃন্দ, আয়োজক কমিটির সদস্য এবং বিশেষ অতিথিগণ। তাদের সম্মিলিত উপস্থিতিতে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় এই যুব অলিম্পিয়াডের সিজন-৩ এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরবর্তী সিজন-৩ এর জন্য রেজিস্ট্রেশনের আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্ব হয়ে ওঠে এক উৎসবমুখর পরিবেশে। বিজয়ী প্রতিযোগীদের সাথে বিশেষ অতিথি, জুরি বোর্ড সদস্য, পার্টনারস এবং আয়োজকদের সম্মিলিত ফটোসেশন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর শুরু হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেখানে তরুণ জনপ্রিয় জনপ্রিয় শিল্পী জাহিদ অন্তু ও তার ব্যান্ড টিম উপস্থাপন করেন দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গান। এই সমস্ত আয়োজন উপস্থিত সকল দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে এবং অনুষ্ঠানকে করে তোলে স্মরণীয়।
আপনার মতামত লিখুন :