ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্টে হোক কিংবা অফিসের কাজ—কপি-পেস্ট ছাড়া যেন চলেই না। কম্পিউটারে লেখালেখির সবচেয়ে প্রচলিত ও দরকারি ফাংশনের একটি হচ্ছে ‘কাট, কপি ও পেস্ট’।
অথচ আমরা অনেকেই জানি না, এই অভাবনীয় সুবিধার পেছনে যার অবদান, তিনি হলেন মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ল্যারি টেসলার (২৪ এপ্রিল ১৯৪৫–১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০)।
নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া লরেন্স গর্ডন টেসলার, সংক্ষেপে ল্যারি টেসলার, ষাটের দশকে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই সময় কম্পিউটার প্রযুক্তি ছিল অনেকটাই সীমিত ও জটিল। গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস বলতে কিছু ছিল না, বরং ব্যবহারকারীদের জটিল কমান্ড দিয়ে কাজ করতে হতো।
এই পরিস্থিতি বদলানোর মিশনে যুক্ত হন টেসলার। লক্ষ্য ছিল—কম্পিউটারকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ও ব্যবহারবান্ধব করে তোলা।
১৯৭৩ সালে টেসলার যোগ দেন জেরক্সের পালো অল্টো রিসার্চ সেন্টারে (Xerox PARC)। এটি ছিল সে সময়ের সবচেয়ে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি গবেষণাগার। এখানে কাজ করার সময়ই তিনি সহকর্মী টিম মট-এর সঙ্গে মিলে তৈরি করেন ‘Gypsy’ নামের একটি টেক্সট এডিটর—যেটিকে বলা হয় প্রথম দিকের গ্রাফিক্যাল টেক্সট এডিটরগুলোর একটি।
এই ‘Gypsy’ সফটওয়্যারেই প্রথম যুক্ত হয় Cut, Copy ও Paste ফিচার। উদ্দেশ্য ছিল—ইউজারদের দ্রুত ও সহজে টেক্সট এডিট করার সুবিধা দেওয়া। পরবর্তী সময়ে এই উদ্ভাবন হয়ে ওঠে আধুনিক কম্পিউটিংয়ের অপরিহার্য অংশ।
ল্যারি টেসলারের প্রতিভা নজরে আসে অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের। ১৯৮০ সালে স্টিভ জবস তাকে অ্যাপলে যোগ দিতে রাজি করান। পরবর্তী ১৭ বছর তিনি অ্যাপলে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। অ্যাপলের Lisa ও Macintosh কম্পিউটার প্রকল্পে টেসলারের ভূমিকা ছিল অগ্রণী।
১৯৮৩ সালে অ্যাপলের Lisa কম্পিউটারে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয় Cut, Copy, Paste কমান্ড। এ ছাড়া টাইপিংয়ে কারসর (Cursor) ব্যবহারের ধারণাটিও তার মস্তিষ্কপ্রসূত।
অ্যাপল ছাড়ার পর ল্যারি টেসলার কাজ করেন আমাজন, ইয়াহু ও ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন-ভিত্তিক বিভিন্ন স্টার্টআপে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি কাজ করেছেন এমন সফটওয়্যার ও ফিচার উদ্ভাবনে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে সহজতর করে।
টেসলারের উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তিগত নয়, দার্শনিকও বটে। তিনি একটি বাণী প্রায়ই বলতেন, যা তার কাজের দর্শনকেই প্রকাশ করে- “No modes”— অর্থাৎ সফটওয়্যার ব্যবহারে যেন কোনো জটিল মোড বা ধাপ না থাকে, সবকিছু যেন সরাসরি, সহজ ও ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক হয়।
এই বিশ্বাস থেকেই তিনি এমন সব ফিচার উদ্ভাবনে মন দেন, যা আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করেছে।
প্রযুক্তির এই কিংবদন্তি ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তবে তার উদ্ভাবন বেঁচে রয়েছে কোটি কোটি মানুষের হাতের মোবাইল বা ডেস্কটপের প্রতিটি ‘Control+C’ এবং ‘Control+V’-এর কমান্ডে।
আপনার মতামত লিখুন :