ইকোসিস্টেম, প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছুর অবস্থান যা যেখানে আছে তা ঠিক রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো যেন সবার কাছে দৃশ্যমান হয়,-ইউএনডিপি’র নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ পরামর্শ দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপদ্রীপ চাকমা।
রোববার ১২ জানুয়ারি বিকালে ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে “ইকোসিস্টেম প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং টেকসই উন্নয়ন” শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি ইউএনডিপি’র গৃহীত নতুন প্রকল্পের কার্যাবলী পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের এ উপদেশ দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপদ্রীপ চাকমা বাস্তবমূখী পরিবেশ ও সকলের উপযোগী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএনডিপি জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঁচ বছর মেয়াদি ইকোসিস্টেম প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে ৫০.৬ মিলিয়ন ডলার রিসোর্সের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত প্রপোজালে টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (টিএপিপি) প্রণয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্র্র্র্রকল্পে জিওবি খাত থেকে ৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার জন্য প্রস্তাব পেশ করে ইউএনডিপি।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এ প্রসঙ্গে ইউএনডিপি প্রতিনিধিদের জানান, এ সংক্রান্ত প্রকল্পে জিওবি চাহিদা বছর বছর ওয়ারি বরাদ্দ মঞ্জুর করা যাবে। তবে সরকারি বরাদ্দ আরও কমানো উচিত বলে মত দেন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই, ইউএনডিপি গৃহীত প্রকল্পগুলোর স্থায়িত্ব বেশিদিনের হউক। প্রকল্প শুরু করার আগেই এর এক্সিট প্লানও করে রাখা উচিত। প্রকল্প শেষে যেন এ কাজগুলো দীর্ঘদিন টিকে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এ প্রকল্পে সম্পৃক্ত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি পরামর্শ দেন। প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকল্পের উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ও পরিবেশের কোনো বিরূপ কিছু ঘটানো যাবে না। বন-জঙ্গল ও প্রাণিকূলের পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে ইকোসিস্টেমে পরিবেশবান্ধব বাঁশ চাষকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়ের পরিবেশকে সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে হবে। পাহাড় টিকিয়ে রাখতে হলে বন-জঙ্গল, ঝিরি, ঝরণা, বাঁশ ঝাড়ের চাষ বাড়াতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় বাঁশ খুবই কার্যকরী উপাদান। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, কাপ্তাই লেক এর পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগ কাপ্তাই লেকে এখন প্রচুর বিনিয়োগ করছে। এছাড়া কাজু বাদাম, কফি চাষ, ইক্ষু চাষ বাড়ানোর বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। আগামি ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে কাজু বাদাম ও কফি চাষে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের বিখ্যাত খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে মত প্রকাশ করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্ট করা হচ্ছে আমার আরেকটি উদ্যোগ। পার্বত্য চট্টগ্রামে লাইভলিহুড ডেভেলপমেনট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এগুচ্ছি।
উপদেষ্টা বলেন, গ্রামিণ নারীদের হাঁস পালন কর্মসূচিত অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ৬০টি হাঁস একটি পরিবার পালন করলে সে পরিবারের আর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা পলিসি’র উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষকদের ম্যাথ, ইংলিশ ও সায়েন্সের বিষয়গুলোতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় এসব বিষয়ে দক্ষ ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, প্রতি উপজেলায় স্যাটেলাইট স্কুল নির্মাণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ছাত্রদের জন্য হোস্টেল গড়ে তোলার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প ও মৎস্য আহরণ প্রসারের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে ভূমিকা রাখা সবচেয়ে সম্ভব বলে জানান উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিষদকে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও আহ্বান জানান তিনি।
ইকোসিস্টেমস রেস্টোরেশন এন্ড রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট অব সিএইচটি প্রকল্পের প্রজেক্টর পরিবেশন করেন ইউএনডিপি’র আন্তর্জাতিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইয়্যূগেস প্রধানাং (Yugesh Pradhanang)। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ নতুন প্রকল্পটি জলবায়ু, ইকোসিস্টেম, স্থিতিস্থাপকতা, নারী ও পুরুষ জেন্ডারের সম অংশগ্রহণ, নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং জীবিকা নির্বাহ ইত্যাদি বিষয়ের উপর কাজ করবে। জলাশয় ব্যবস্থাপনা, বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, লাইভলিহুড দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা হলো এ প্রকল্পের কাজ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. রাশিদা ফেরদৌস এনডিসি এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম এনডিসি, যুগ্মসচিব কংকন চাকমা, যুগ্মসচিব সজল কান্তি বনিক, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (উপসচিব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, উপসচিব ড. মো. গোলাম কিবরিয়া, উপসচিব মুন্না বিশ্বাস, ইউএনডিপি’র কর্মকর্তা রিক্তা মহিন্তা, রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টিভ স্টেফেন লিলার, ইউএনডিপি’র আন্তর্জাতিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইয়্যূগেস প্রধানাং (Yugesh Pradhanang) ইউএনডিপি’র ফরেস্ট এন্ড ওয়াটারসেড ব্যবস্থাপনার চিফ টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ ড. রাম শর্মা, ঝুমা দেওয়ান, সুপ্রিয়া ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
       -20251031190935.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন