বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বৈরিতা যেন নতুন রূপ নিয়েছে। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় সংঘটিত সশস্ত্র হামলার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এ ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে- যদি সত্যিই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, তবে কার পক্ষ নেবে বাংলাদেশ?
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিষয়টি জটিল এবং বহুস্তরবিশিষ্ট। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নানা কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা, পানিবণ্টন সমস্যা, বাণিজ্যে অসমতা এবং কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের জনগণের একাংশ ভারতকে এখন একটি কর্তৃত্ববাদী প্রতিবেশী হিসেবে দেখছেন।
এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ও দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি।

এর বিপরীতে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে কূটনৈতিকভাবে শান্ত এবং বাণিজ্যিক আলোচনাও অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে একটি স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ সরাসরি আক্রান্ত না হলে সরকারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন মেনে শান্তিপূর্ণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমি যুদ্ধবিরোধী মানুষ। পৃথিবীতে যেন আর যুদ্ধ না হয়, সেটাই চাই। যুদ্ধের প্রস্তুতিও একধরনের হুমকি। কিন্তু এমন এক দুনিয়ায় বাস করছি, যেখানে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের আশঙ্কা আমাদের ঘিরে রাখে। ফলে সুরক্ষা ব্যবস্থাও জরুরি হয়ে ওঠে।’
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও আবেগময় সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক কখনো কখনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে, যদি জনগণের মাঝে ভারতের প্রতি অসন্তোষ বাড়তে থাকে, তবে সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক প্রধানদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নেবে না, তবে যদি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় কিংবা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে প্রতিরক্ষা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। যুদ্ধ না হলেও, যুদ্ধের সম্ভাবনা চারপাশে যে ছায়া ফেলছে, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে- বাংলাদেশের প্রতিটি সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক দক্ষতা এবং জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।