ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫

সিলেটের চার জেলায় বন্যার ঝুঁকি, উত্তরে বাড়ছে ভারতের পানি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৪:১৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং ভারতের মেঘালয় ও আসাম অঞ্চলের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয়, হাওরাঞ্চল ও পার্বত্য এলাকার জনজীবন।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, এই চার জেলায় বন্যার আশঙ্কা প্রবল। সিলেটের সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপরে, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদে ৯৩ সেন্টিমিটার ওপরে এবং মনু নদ মৌলভীবাজারে এক সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪০৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও আসামে যথাক্রমে ১২২ এবং ৪১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা আরও বাড়ছে। ফলে সিলেট নগরীর বহু এলাকায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে, মানুষের চলাফেরা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

মৌলভীবাজারের জুড়ী, বড়লেখা ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাউবো জানিয়েছে, কয়েকটি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি আরও বাড়লে সেগুলো ভেঙে যেতে পারে।

মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘সব উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রস্তুত আছে, আশ্রয়কেন্দ্র ও শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে।’

নেত্রকোনাতেও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুয়েল সাংমা বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

সুনামগঞ্জসহ বন্যাকবলিত অঞ্চলে আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশু পালনকারী ও বিক্রেতারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘গবাদিপশুর খাবার পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খড় ও পশুর খাদ্য উঁচু স্থানে সংরক্ষণ এবং গরু রাখার ঘর শুকনা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’

লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পানির ঢলে তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফেনীর মুহুরী, চট্টগ্রামের হালদা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোতে পানি ঢুকেছে। হাওড়া বাঁধ রক্ষায় কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম। বাণিজ্যিক এলাকা প্লাবিত হলে আখাউড়া-আগরতলা স্থলসড়ক বন্ধ হয়ে দুই দেশের মধ্যে রপ্তানি-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাহাড়ি জেলায় পাহাড়ধসের শঙ্কা

চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের কিছু অংশে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে কয়েক স্থানে ধসের ঘটনা ঘটেছে, যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

বান্দরবানের লামায় কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র সতর্কতামূলকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পানিবন্দি মানুষের জন্য ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে সরিয়ে নিতে মাইকিং চলছে।