কোরবানির ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি পশুর হাটে বড় গরুর ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। হাটে প্রচুর বিশাল আকৃতির গরু এলেও ক্রেতা কম থাকায় বিক্রেতাদের চোখে-মুখে হতাশা এবং কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
আজ বুধবার (৫ জুন) দুপুরে উত্তরা দিয়াবাড়ি কোরবানির হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল মাঠজুড়ে সারি সারি গরু বাঁধা রয়েছে। খামারিরা প্রতিটি গরুর পাশে হতাশ দৃষ্টি নিয়ে বসে আছেন।
বড় গরুগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কেউ কেউ সেগুলোর গায়ে রঙিন কাপড় ও ফিতা বেঁধেছেন, আবার কেউ কেউ গায়ে তেল দিয়ে সাজিয়েছেন। বিক্রেতারা বড় আকৃতির একেকটি গরুর দাম ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত চাইছেন।
তবে আশপাশে ক্রেতারা ঘোরাঘুরি করলেও বেশিরভাগই শুধু দেখছেন, দরদাম করছেন না। বিক্রেতারা ‘ভাই, দেখে যান, দেশি গরু, ভালো দামে ছেড়ে দেব’ বললেও অনেক ক্রেতাই ‘গরু সুন্দর, কিন্তু বাজেটের বাইরে’ বলে চলে যাচ্ছেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় গরুগুলো ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে। একেকটি বিশালাকৃতির ষাঁড়ের ওজন এক টন থেকে দেড় টন পর্যন্ত।
এক গরু বিক্রেতা জানান, গত তিন বছর ধরেই বড় গরুর চাহিদা কম। এবার অবস্থা আরও খারাপ। গরু মোটাতাজা করতে এবং হাটে আনতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন বিক্রি না হলে পথে বসতে হবে।
বড় গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা মো. ছলেমান মিয়া বলেন, ‘এই দুইটা গরু লালন-পালনে আমার এক বছর সময় লেগেছে। প্রতিদিন দেড় হাজার টাকা শুধু খাবারের খরচই গেছে। দাম চাচ্ছি ৯ লাখ টাকা, কিন্তু কেউ ৬ লাখের বেশি বলে না। এই দামে দিলে তো আমার মূলধনই উঠবে না।’
আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘এখনও আশানুরূপ ভিড় নেই। লোকজন দেখে যায়, সেলফি তোলে, দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। বড় গরুর কদর আগের মতো নেই।
অথচ আমরা ঋণ নিয়ে গরু মোটাতাজা করেছি। বিক্রি না হলে ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা, ঋণের কিস্তিও দিতে পারব না।
অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, তাদের সামর্থ্যের সঙ্গে দামের মিল নেই। তাই তারা মাঝারি গরুর দিকে ঝুঁকছেন।
এক ক্রেতা বলেন, ‘বড় গরু দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু দাম শুনলেই পিছিয়ে আসতে হয়। একটা গরুর দাম ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা বলছে। মধ্যবিত্তের পক্ষে এই খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই মাঝারি সাইজের দিকে ঝুঁকছি।’
তবে বিক্রেতাদের দাবি, খাবার, ওষুধ, খামারের শ্রমিক সবকিছুর খরচ গত এক বছরে অনেক বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই তারা বড় গরুর দাম তুলনামূলক বেশি চাইছেন।
এমন অবস্থায় অনেক বিক্রেতাই শেষ মুহূর্তের ভিড়ের ওপর ভরসা করছেন।
তবে হাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, এখনও হাট পুরোপুরি জমে ওঠেনি। অনেকেই শেষ মুহূর্তে আসেন। বড় গরুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। তারা আশা করছেন, শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা ভালো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :