দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য এখন অনেকটাই কথার ফুলঝুরিতেই সীমাবদ্ধ। মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা-বাড়ছে নানা ধরনের মারাত্মক অপরাধ। শুধু সন্ত্রাসীরা নয়, অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন সরকারি কর্মকর্তারাও। এমন তথ্য উঠে এসেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকাতেই।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। তবে গত কয়েক মাসের কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাঠপর্যায়ে ততটা কার্যকর উদ্যোগের চেয়ে বাগাড়ম্বরই বেশি শোনা গেছে। এরই ফলে মাসে মাসে বাড়ছে নানা অপরাধ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়া মাঠপর্যায়ের তথ্যেও সেই চিত্রই উঠে এসেছে।
সরকারি তথ্যমতে, গত মে মাসে সারাদেশে সংঘটিত হয়েছে ২ হাজার ৮০৯টি মারাত্মক অপরাধ। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অন্তত ৫৬৪টি বেশি। সবচেয়ে বেশি অপরাধ হয়েছে রাজধানী ঢাকায়-৫৮১টি ঘটনা নিয়ে শীর্ষে রয়েছে শহরটি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম।
এ ধরনের অপরাধের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। এর মধ্যে রয়েছে খুন, ধর্ষণ, জমি দখল, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অপরাধে সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে কর্মরতদের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অপরাধের সংখ্যা ৪৪টি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম আলী রেজা বলেন, ‘বস্তুগত প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। তবে জবাবদিহিতার অভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগের ঘাটতি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শক্ত নজরদারির অভাব থাকলে এ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। এতে মানুষের সহজাত প্রবণতাও বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ফৌজদারি মামলার সংখ্যাও বেড়েছে ৩২ হাজারের বেশি।
বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক ব্যানার ব্যবহার করে একাধিক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন খারাপ হচ্ছে, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনাও ব্যাহত হচ্ছে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে আবারও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।