জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয়জন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অন্যান্য কর কর্মকর্তারা।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম রোববার (২৯ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকির সুযোগ করে দিচ্ছেন। এতে সরকার প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর ফাঁকির পাশাপাশি কর ফাঁকির মিথ্যা মামলা করে ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের হয়রানি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
আকতারুল ইসলাম জানান, অনেক করদাতা অগ্রিম বা বেশি কর পরিশোধ করেন। নিয়ম অনুযায়ী এই বাড়তি কর ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কর কর্মকর্তারা ঘুষ ছাড়া সেই টাকা ফেরত দেন না। বরং ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ায়ও তারা ভাগ বসান।
তিনি আরও বলেন, “তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগে উঠে এসেছে যে কর ফেরতের ক্ষেত্রে অর্ধেক পরিমাণ ঘুষ বা উপহার দিতে হয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের কর্মকর্তারা নিজেদের লাভবান করছেন এবং রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত অবস্থায় শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর আদায়ে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তারা কর ফাঁকির সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন করেছেন।
দুদক যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাচ্ছে তারা হলেন, আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, ঢাকা কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমি যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ এর উপ-কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এবং ভ্যাট বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারেক রিকাবদার, কাস্টমস অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু।
এনবিআরের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগ ও আভ্যন্তরীণ সংকট চরমে পৌঁছালে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে রোববারই (২৯ জুন) সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অচলাবস্থা চলতে দেওয়া যাবে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত কর্মস্থলে ফিরে না এলে সরকার কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে।’