গত ১৫ বছরে গুমের শিকার হওয়া নাগরিকদের শুধু অপহরণ ও গোপন আটকেই রাখা হয়নি। তাদের ওপর চালানো হয়েছে বর্বর নির্যাতন। এসব নির্যাতনের মধ্যে অন্যতম ও ভয়াবহ ছিল গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভুক্তভোগীদের পুরোপুরি উলঙ্গ করে তাদের গোপনাঙ্গে ক্লিপ লাগিয়ে শক দেওয়া হতো। কেউ কেউ তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতেন। কখনো আবার পানিতে ভরা বালতিতে প্রস্রাব করতে বলেই তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে শক দেওয়া হতো বলে জানা গেছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ ভুক্তভোগী যৌন নির্যাতনের বিবরণ দিতে লজ্জা ও আতঙ্কে অনীহা দেখিয়েছেন। তবু অনেকেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন, যদিও তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
কমিশনের নথিতে উঠে আসা কয়েকটি সাক্ষ্য:
১৮ বছর বয়সি যুবক (অপহরণ: ২০২২)
৪৫ দিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। কমিশনকে জানান, চোখ বাঁধা অবস্থায় প্রচণ্ড মারধর করা হয় তাকে। পরে প্রস্রাব করতে বলা হলে সঙ্গে সঙ্গে এমন শক দেওয়া হয় যে মনে হয়েছিল তিনি এক লাফে ওপরে উঠে গেছেন।
১৯ বছর বয়সি যুবক (অপহরণ: ২০১৬)
সাত দিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। জানায়, দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে মারধর করা হয় এবং গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। একটি ভিডিও রেকর্ডিংয়ে তাকে নির্দিষ্টভাবে কথা বলতে বাধ্য করা হয়।
২০ বছর বয়সি যুবক (অপহরণ: ২০১৪)
৩৪ দিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বলেন, চোখ বাঁধা ও হাতকড়া অবস্থায় উলঙ্গ করে ঝুলিয়ে দীর্ঘ সময় শক দেওয়া হয়। শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
২৯ বছর বয়সি যুবক (অপহরণ: ২০১৬)
৫৩ দিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বলেন, তাকে উলঙ্গ করে ঝুলিয়ে যৌনাঙ্গে শক দেওয়া হয়, ভয় দেখিয়ে বলা হয়, ‘তথ্য না দিলে তোকে পুরুষত্বহীন করে দেব।’ দীর্ঘ ইলেকট্রিক শকে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়।
৩০ বছর বয়সি যুবক (অপহরণ: ২০১৪)
৩৯ দিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তিনি জানান, অপহরণের সময়ই গাড়িতে তোলা মাত্র তাকে উলঙ্গ করে গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। ঈদের দিন সকালেও তাকে একইভাবে নির্যাতন করা হয়।
২৪ বছর বয়সি যুবক (অপহরণ: ২০১৯)
৬২ দিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। অভিযোগ করেন, প্রচুর পানি খাওয়ানোর পর প্রস্রাব করতে বলেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে শক দেওয়া হয়।
এই ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্রগুলো কমিশনের গোপন প্রতিবেদনে নথিভুক্ত হলেও কোনো নির্দিষ্ট বাহিনী বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিলেন তরুণ এবং অনেকেই এখনো ভয় ও আতঙ্কে এসব অভিজ্ঞতা প্রকাশে অনিচ্ছুক। তা সত্ত্বেও এসব বর্ণনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের প্রমাণ বহন করে বলে জানিয়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।