শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম

‘মোর ছাওয়ালেক মারলু ক্যানে’, ছেলেকে হারিয়ে বলছেন মা 

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম

শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকত। ছবি- সংগৃহীত

শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকত। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের একপ্রান্তে প্রতিদিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন এক মাহবুবুর রহমান। কারও সঙ্গে কথা বলেন না, কারও দিকে তাকান না। শুধু শূন্য চোখে যেন কারও খোঁজ করেন। খুঁজেন তার একমাত্র ছেলে মাহমুদুর রহমান সৈকতকে, যে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ঠিক এই জায়গাতেই, গত বছরের ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে।

মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রাণ হারানো সৈকত সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

বাবার দোকান ‘দই ঘরে’ মাঝেমধ্যে বসতেন তিনি, একটি যৌথ পরিবারের ছেলে তিনি, মায়ের আদরের, দুই বোনের দুলাল।

কী ঘটেছিল সেদিন?

তখন দুপুর আর ক্যালেন্ডারে সেদিন ১৯ জুলাই, শুক্রবার। বাবা ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। জুমার নামাজের পর সৈকত দোকানে যান। দোকান খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি শুনতে পান, নূরজাহান রোডের মাথায় সংঘর্ষ চলছে, তার এক বন্ধুর গায়ে গুলি লেগেছে। সৈকত দোকান বন্ধ করে ছুটে যান বন্ধুকে খুঁজতে।

তারপর সময় গড়িয়ে যায়, কিন্তু... আর ফিরে আসেন না সৈকত।

পরিবারের সদস্যরা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। একসময় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেখা মেলে সৈকতের নিথর দেহ। মাথায় গুলির ক্ষত। রক্তে ভেজা তার মুখ, শরীর।

গুলি গলার নিচে লেগে মাথা ভেদ করে বের হয়ে যায়।

রাজপুত্র আর ফিরবে না

সৈকতের মা আফরোজা রহমান এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না, তার ছেলেটা আর নেই।

মা কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলে আমার দেখতে রাজপুত্রের মতো ছিল। ঘরের সব কাজে আমাকে সাহায্য করত। বাইরের খাবার খেতে চাইত না। আমার রান্নাই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। খাওয়ার পর সবসময় আমার ওড়নায় মুখ মুছত। সেদিনও তাই করেছিল। এখন আর কেউ মুখ মুছে না।’

আবেগে কাঁপা কণ্ঠে আরও বলেন, ‘সেদিন নামাজ পড়ে বের হয়ে গেছি খোঁজে। রাস্তায় গুলির শব্দ, টিয়ার শেলের ধোঁয়া। হঠাৎ এক জায়গায় দেখি ভিড়। বুঝতেই পারিনি, সেই ভিড় আমার ছেলেকে নিয়েই।’

সৈকতের বড় বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, ‘ভাইটা আমাদের প্রাণ ছিল। মিছিলে সবার সামনে দাঁড়ানোর মতো সাহস ওর ছিল, এটা আমরা জানতাম না। সে ছিল সবার চেয়ে ছোট, অথচ মাথা উঁচু করে ছিল।’

হাসিনাকে কেন ভোট দিলাম?

সৈকতের রাজনৈতিক সচেতনতাও উঠে এসেছে তার মায়ের কথায়। আফরোজা রহমান বলেন, ‘‘ছেলে বলত, ‘কেন যে হাসিনা সরকারকে ভোট দিলাম! ছেলেগুলারে মারতেছে!’’

মা বলেন, ‘এবারই প্রথম ভোট দিয়েছিল সৈকত।’

প্রথমদিকে বিচার চাইবেন না বললেও এখন বদলেছে সৈকতের পরিবারের মনোভাব। তার মা বলেন, ‘প্রথমে বলেছিলাম, বিচার চাই না। এখন বলছি, আমার রাজপুত্রের হত্যার বিচার চাই। এত মায়ের বুক খালি হয়েছে, তাদের আর্তচিৎকার বিফলে যেতে পারে না।’

সৈকতের ব্যবহৃত জামাকাপড় এখনো সযত্নে তুলে রেখেছেন তার মা। তার প্রিয় বিড়ালটাও আজ নিঃশব্দে ঘোরে ঘরের কোণে, আর তার পরিবার এখন প্রতিদিন অপেক্ষা করে সেই মানুষটির, যে আর কখনো ফিরবে না।

Shera Lather
Link copied!