২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট দাবি করেছে, এ বিষয়ে গোপনে রেকর্ড করা একাধিক ফোনালাপ তাদের হাতে এসেছে।
আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট নতুন গোপন কল রেকর্ড প্রকাশও করেছে। যেখানে শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ‘ওপেন অর্ডার’ দেওয়ার কথা বলেছেন। রেকর্ডিংয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর’ নির্দেশও রয়েছে।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে ২০২৪ সালের ওই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের ভেতরের আলোচনা, সিদ্ধান্ত ও দমননীতির বিস্তৃত বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
আলজাজিরা প্রকাশিত প্রামাণ্যচিত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, তিন সপ্তাহব্যাপী চলা আন্দোলনে সরকারদলীয় নিরাপত্তা বাহিনী ৩০ লক্ষাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। সেই গুলিতে ১৫০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রকাশিত একটি ফোনালাপে, ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপশকে বলেন, ‘আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে... আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’
অন্য এক রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটি ওপর থেকে- এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।’
এদিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সরকারের ভেতরে চলে এক নাটকীয় ঘটনা। এ বিষয়ে প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হয়, সরকার হুমকি ও ঘুষের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি পাঁচবার পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তন করে গুলির কোনো উল্লেখ মুছে ফেলা হয়। সে সময়ে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ফোনে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহে তৎপর ছিলেন।
পরে ছড়িয়ে পড়া ক্ষেভের মুখে ঘটনাটি সামাল দিতে- আতঙ্কে থাকা আবু সাঈদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়।
অনুসন্ধানে আলজাজিরা আরও দাবি করেছে, তারা ফাঁস হওয়া গোপন নথিপত্রে দেখেছে কীভাবে শেখ হাসিনার সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে সহিংসতার ছবি বিশ্ববাসীর কাছ থেকে গোপন রেখেছিল।
এদিকে আলজাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে কল রেকর্ডিংগুলো অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলেছে, শেখ হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেননি এবং ১৮ জুলাইয়ের রেকর্ডিংকে ভুয়া বলেছে তারা। একইসঙ্গে, আবু সাঈদের পরিবারের আতঙ্ক নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও, সরকারি বাহিনীর অসদাচরণ তদন্তে শেখ হাসিনার আগ্রহ ছিল বলেও দাবি করেছে।
বিবৃতিতে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে তারা জানায়, আন্দোলনকারীদের ‘ভাঙচুরে’ ইন্টারনেট অবকাঠামোর ক্ষতি কারণে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ।