সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়াতে পে কমিশন গঠন করেছে সরকার। কিন্তু বেসরকারি খাতের বিপুলসংখ্যক চাকরিজীবীর বেতন বাড়াতে নেই কার্যকর উদ্যোগ, যা সামাজিক বৈষম্য আরও উসকে দেবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এ কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানকে। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ১০ বছর পর বেতন কমিশন হলো।
গত সরকারের সময়ে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যদিও এটিকে গত মাসে ৮ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতনের সমন্বয় এখনো ঠিকমতো হয়নি। সে জন্যই সরকার মনে করছে, একটি বেতন স্কেল হওয়া উচিত।
এমনিতেই দেশে দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে। বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার। উল্টো কর্মসংস্থান কমছে। সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে অনেকে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়লে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ফলে সরকারি খাতের সঙ্গে বেসরকারি খাত বৈষম্যের চাপে পড়বে। তৈরি হবে মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ সরকারি ও বেসরকারি সবার ওপরে আছে। সরকার চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও বেসরকারি খাতে দীর্ঘদিন বেতন বাড়েনি। সরকারি পর্যায়ে বেতন বাড়লে বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়বেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা। সরকারের হাতে টাকা নেই। মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে বৈষম্য বাড়াবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১.৬৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তা প্রায় দুই অঙ্কের ঘরেই ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। পরে তা কমে ৯ শতাংশের বেশি ছিল। গত জুন মাসে কিছুটা কমে ৮.৪৮ শতাংশ হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ও নানা কৌশলে কমে এলেও ধরে রাখা কঠিন। এর পরও প্রকৃত দামের চেয়ে গত এক বছরে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি দামে পণ্য কিনেছে ভোক্তা। মূল্যস্ফীতির এই হার অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। বিশেষ করে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এক পণ্যে কিছুটা কমলেও অন্য পণ্যে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হলে বেসরকারি খাতে চাকরিজীবীরা সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, বেতন বৃদ্ধির এই দৌড়ে নেই বেসরকারি খাত।
শ্রম জরিপ অনুযায়ী, দেশে চাকরির বাজারে নিয়োজিত এখন প্রায় ছয় কোটি মানুষ। তার মধ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতেই কাজ করে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ। করোনা এবং বৈশ্বিক নানা সংকটে দীর্ঘ সময়ে বাড়েনি বিপুলসংখ্যক এসব মানুষের বেতন। বাড়িভাড়া, খাওয়া-পরা সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের মানুষের বড় অংশ।
দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা পান। আর সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এই সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ।

 
                             
                                    



 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
       -20251031190935.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন