জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নারী প্রতিনিধিত্ব ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে এখনো আলোচনা বাকি থাকলেও, আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সংলাপের চূড়ান্ত পর্বে তা সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল নারী প্রতিনিধিত্ব। আলী রীয়াজ জানান, প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, জাতীয় সংসদে নারী আসনের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১০০-তে উন্নীত করা হবে।
তিনি জানান, যদিও কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে, তবু অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে কার্যকর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে মূল সিদ্ধান্তগুলো: বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন। জুলাই সনদ অনুযায়ী, প্রত্যেক দলকে ন্যূনতম ৫% নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান। আগামী সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম ১০% নারী প্রার্থী মনোনয়ন সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব। ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি নির্বাচনে নারী প্রার্থীর হার ৫% করে বাড়ানো। সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত, তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে তা বাতিলযোগ্য।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে একটি ধারণাপত্র রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে তুলে দিয়েছে কমিশন। আলী রীয়াজ জানান, বর্তমানে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারেন।
তবে কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যেন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন।
প্রস্তাবিত নিয়োগের তালিকায় রয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, তত্ত্ব কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, টেলিকম নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান এবং ডিজিএফআই ও এনএসআই মহাপরিচালক।
এ প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলো পর্যালোচনা করবে এবং সম্মত হলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।
সংলাপের এ পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও উচ্চপদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতেও আলোচনা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে অগ্রগতি জানানো হয়।
আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের লক্ষ্য আগামীকাল জুলাই সনদের বিষয়গুলোতে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য অর্জন। ইতোমধ্যে ১৪টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, যার মধ্যে নারী প্রতিনিধিত্ব অন্যতম।
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোকে লিখিত সংশোধনী ও সংযোজন জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা কমিশন পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সংশোধনী নেবে।
সংলাপের এই পর্যায়ে কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো মিলিতভাবে একটি সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় সনদ তৈরির পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
আলী রীয়াজ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রথম ধাপে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর একটি কপি ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, কালকের মধ্যেই সংযোজন-বিয়োজনের প্রস্তাব দিয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :