বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বছরের মাথায়ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিশীল লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি—হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এমন এক প্রতিবেদনকে ‘কিছুটা একপেশে রিপোর্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলছেন, ‘গ্রেপ্তার ও বিচারে হয়রানি রোধে অনেকগুলো আইনগত সংস্কার ইতোমধ্যে করেছি। এসবের উল্লেখ রিপোর্টে নেই।’
এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তারের বাস্তব প্রেক্ষাপট কতটা বদলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গত এক বছরে ফ্যাসিস্ট আমলে দায়েরকৃত প্রায় ১৫ হাজার হয়রানিমূলক মামলা ও কুখ্যাত সাইবার আইনে দায়েরকৃত প্রায় সকল মামলা প্রত্যাহার করেছি।’
রাজনৈতিক প্রতিশোধের বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রতিশোধ বলতে যদি শেখ হাসিনার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলাকে বোঝানো হয়, এসব মামলা সরকার দেয়নি। দিয়েছে বিগত আমলে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষ বা তাদের পরিবার।’
এর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দমনমূলক শাসনের অবসান ঘটানোর পর গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে আশার জন্ম হয়েছিল তা এখন অনেকটাই ম্লান।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘যারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনার নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ।’
তিনি অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকারের প্রশাসন এখনো সংস্কারবিহীন নিরাপত্তা খাত, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতির মাঝে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যস্ত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে মামলা, বিচারবহির্ভূত আটক এবং নির্যাতন চলমান। ক্ষমতা ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে মনে করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একাধিক গুরুতর সংকটের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে মব ভায়োলেন্স, রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং সংবাদকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন। এ ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় কট্টরপন্থিদের মতো অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো নারীর অধিকারের প্রতি প্রকাশ্য বিরোধিতা দেখাচ্ছে, যা মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গত ২৬ ও ২৭ জুলাই, রংপুর জেলায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের অন্তত ১৪টি বাড়িঘরে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার ওপর সহিংসতার ঘটনাও চলমান।
এসব বিষয়ে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, ‘ইউনূস সরকারের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। তবে এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলগুলোকেই এখন এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আর কখনো এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি না হয়।’