আগামীকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদ্যাপন করবেন। এ উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিগত বছরের মতো এবারও ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা।
শনিবার বিকেল ৩টায় পলাশী মোড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। প্রতি বছরের মতো এবারের শোভাযাত্রা একই রুট অনুসরণ করে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমী উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানান মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে, বিরাজিত পরিস্থিতি তা ধারণে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন সংগঠন দুটির নেতারা। তারা জানান, তারা শঙ্কিত এ কারণে যে, অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এই নতুন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতাদের আন্তরিক চেষ্টায় সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্রতা কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে নীরব চাঁদাবাজি, যার মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে নির্ধারিত অর্থ প্রদান না করলে তাদের বাড়িঘর, জায়গা-জমি চলে যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দু শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব ঘটনার কারণে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বক্তারা অবিলম্বে এ পরিস্থিতির অবসান দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের এই নতুন কৌশল গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বক্তব্যে বলা হয়, কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করে তার বিচার ও যথোপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত, তবে আগে নিশ্চিত হতে হবে কাজটি সত্যিই তিনি করেছেন কি না। নিশ্চিত হওয়ার আগেই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে পাড়ায় পাড়ায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। নারীরা প্রকাশ্যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এসে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বাংলাদেশকে ‘এক পরিবার’ হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। বিভিন্ন কমিশনের মধ্যে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ সীমিত, গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধনী ও কমিশনগুলোতে তাদের অবস্থান নেই। বক্তারা মনে করেন, নতুন বাংলাদেশের ধারণা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে সব বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।
মতবিনিময় সভায় পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনাচরণ হুমকির মুখোমুখি। নারীরা রাস্তাঘাটে বের হলে কটূক্তি ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে আরও বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুরা হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, সহসভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি বাবুল দেবনাথ, শ্যামল কুমার রায়, যুগ্ম-সম্পাদক শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস (সাধন) ও ব্রজগোপাল দেবনাথ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন