যারা ধর্মীয় উপাসনালয়কে অপবিত্র করতে চায় তাদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নাই। তাদের পরিচয় তারা দুর্বৃত্ত, তারা ক্রিমিনাল। এ ধরনের ক্রিমিনালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের যে ঐতিহ্য এটা আবহমানকাল থেকে আছে, আগামীতেও থাকবে। ধর্মচর্চা আমাদেরকে যেন সংকীর্ণ করে না দেয়। ধর্মচর্চা আমাদের নৈতিকতাবোধ এবং মূল্যবোধের চেতনাকে যেন জাগ্রত করে।’
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ‘টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের ভূমিকা’ শীর্ষক চট্টগ্রাম জেলা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। নগরীর পিটিআই অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম যদি কর্মকে প্রভাবিত করতে না পারে তাহলে জীবনের দাম থাকে না। মানবতার সঙ্গে পরমাত্মার সম্পর্ক যদি আমরা নিবিড় করতে না পারি জীবনের আর দাম নাই, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা যার যার ধর্ম অনুশীলন ও চর্চা করব—এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার। এই দেশ আমাদের সবার। কোনো অসুর বা শয়তান যদি কোনো উপসনালয়, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজারকে অপবিত্র করতে চায়, হামলা চালায়, আমরা একযোগে তাদেরকে প্রতিহত করব।
সবাইকে নিজেদের ধর্ম অনুশীলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা নিজের দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে গিয়ে বাড়ি বানায় তারা কোনোদিন দেশপ্রেমিক নয়—এটা আমার দেশ, আমি এখানেই থাকব। এখানেই আমার জন্ম, এখানেই আমার মৃত্যু। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছে তারা দেশ এবং জাতির শত্রু।’
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে সমস্ত ধর্মের একেকটা উপসনালয় পাশাপাশি উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কত বড় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নমুনা—কোনো বিরোধ নেই! আমরা যার যার ধর্ম পালন করব, কিন্তু পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহানুভূতি, প্রীতি, ভালোবাসা আমাদের লোপ পাবে কেন? আমরা তো একসঙ্গে বাজারে যাই, চাকরি করি। অথচ হিংসা-বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা আমাদের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করেছে ‘
ড. খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশকেও আমরা এ রকম সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দেশে যাতে পরিণত করতে পারি সেই মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। যারা সম্প্রীতি নষ্ট করে দিতে চায়, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। আমাদের ঐতিহ্যকে তারা নষ্ট করে দিতে চায়। এর পেছনে আছে রাজনৈতিক কারণ।’
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। এখানে রাজনীতি ঢোকালে শেষ। পৃথিবীর কোনো দেশে নাই এই চর্চা। আপনি একদিন দেরিতে যাবেন ইউরোপের কোনো ইউনিভার্সিটিতে আপনাকে ঢুকতে দেবে না। আপনাকে বলবে ‘নেক্সট সেমিস্টারে আসো।’ আপনি যদি একটা পরীক্ষা না দেন, কিছুই বলতে হবে না, আপনি স্বাভাবিকভাবেই নেক্সট সেমিস্টারে চলে যাবেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শরিফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ষষ্ঠ পর্যায়ের সহকারী প্রকল্প পরিচালক শ্রী রিঙ্কু কুমার শর্মার সঞ্চালনায় কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প পরিচালক ড. শ্রীকান্ত কুমার পাল, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত, পরিমল কান্তি শীল, অ্যাডভোকেট পার্থ পাল চৌধুরী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপিকা ববি বড়ুয়া ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক সরকার সারোয়ার আলম প্রমুখ।



