ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

‘মুক্তিযুদ্ধের লিখিত প্রায় ৯০ ভাগ ইতিহাসই মিথ্যা’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০২:২৫ এএম
লেখক-গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, ইতিহাসবিদ ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর। তার মতে, এ পর্যন্ত যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে, তার ৮০ থেকে ৯০ ভাগই মিথ্যা, যা মূলত সরকারি ভাষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

দেশের ৫৩তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন,  ‘এই স্বাধীনতা আন্দোলনকে শুরু থেকেই এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন শেখ মুজিবই এর একমাত্র মহানায়ক। পরে তো শেখ হাসিনা এমনভাবে বললেন যেন এটি তাদের পারিবারিক উদ্যোগ ছিল। ইতিহাসের এই আবর্জনা এখন পরিষ্কারের সময় এসেছে।’



স্বাধীনতা যুদ্ধ কিভাবে শুরু হলো, এমন প্রশ্নের উত্তরে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনার ব্যর্থতা এবং ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হামলার কারণে যুদ্ধ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই জনগণ একটি অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব আসলে স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং নিজে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। বাস্তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেননি, বরং অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তিনি দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু জানতে চাইতেন না।’

৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলা হলেও, বাস্তবতা তা নয়। পরিস্থিতির চাপে এবং ছাত্রদের চাপের মুখে শেখ মুজিব আবেগতাড়িত হয়ে এসব কথা বলেন। যেখানে যুদ্ধ কামান, বন্দুক, বিমানসহ শত্রুর বিরুদ্ধে, সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে দুর্গ গড়ার কথা বলার বাস্তবতা ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতদিন যেসব লেখা হয়েছে, তা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত ইতিহাস জানতে নিরপেক্ষ গবেষণা ও সাহসিকতার সঙ্গে সত্যকে তুলে ধরতে হবে।’


 
তিনি আসলে দুটো বিষয়কে মেনে নিতে পারেননি, একটা হচ্ছে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি, যেটা তিনি চেয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়া। এ জন্য স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানতে চাইতেন না, তাজউদ্দিনসহ অন্য নেতারা দেশে কি হয়েছিল ৭১ সালে, সেটা জানানোর এবং বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তিনি কিছুতেই শুনতে চাইতেন না।
 
শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি সম্পর্কে উমর বলেন, ‘৭ মার্চের যে বক্তৃতা, সাধারণত বলা হলো এটা ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা, কারণ শেখ মুজিব বলেছিলেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম ইত্যাদি, কিন্তু দেখা যায় এইসব কথা একেবারেই ভুয়া ছিল। এইসব কথা তিনি বলেছিলেন, তৎকালীন পরিস্থিতির চাপে। কেননা জনগণের অভ্যুত্থান তো ১ মার্চ থেকেই শুরু হয়েছিল। ইয়াহিয়া যখন বললো এখানে জাতীয় পরিষদের বৈঠক ৩ তারিখে হবে না, তখনই কারো অপেক্ষা না করে অভ্যুত্থান আরো তীব্র হলো। সেই পরিস্থিতির চাপে এবং স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য তখন ছাত্রদেরও চাপ ছিল; এ চাপের মুখে উত্তেজনার বশে শেখ মুজিব এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন।’

উমর বলেন, ‘এতে তিনি এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো- এ জাতীয় কথাবার্তা বলেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য কেউ ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করে না, ঘর থেকে বেরিয়েই যুদ্ধ করতে হয়। এটা লাঠিসোঁটারও কাজ নয়, যেখানে শত্রুরা কামান-বন্দুক-যুদ্ধবিমান নিয়ে সজ্জিত আছে; সেখানে লাঠিসোঁটায় কাজ হয় না- শেখ মুজিবের এসব ছিল কেবল কথার কথা।’