দেশজুড়ে অপরাধের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড, চুরি-ছিনতাই, গণপিটুনির মতো ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩৬৮টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৮৩টি। একই সময়ে খুনের মামলা হয়েছে ২ হাজার ২৯৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৩ হাজার ১৩০টি, অপহরণ ৬২৫টি, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৮৭টি। ডাকাতি, দস্যুতা, দাঙ্গা, সিঁধেল চুরিসহ অসংখ্য মামলা হয়েছে।
২০২৪ সালে সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে মোট মামলা হয়েছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৫টি। খুনের মামলা ছিল ৩ হাজার ৪৩২টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৭ হাজার ৫৭১টি, অপহরণ ৬৪২টি এবং পুলিশ হামলা-লাঞ্ছনার মামলা ছিল ৬৪৩টি।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, শুধু আগস্ট মাসেই ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জুলাই মাসে গণপিটুনির সংখ্যা ছিল ৫১, নিহত হয়েছিলেন ১৬ জন। নিহতদের মধ্যে ১০ জনকে চুরির অভিযোগে, ৪ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ৩ জনকে ডাকাতির অভিযোগে, ২ জনকে পূর্বশত্রুতার জেরে, ২ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১ জন মাদক মামলার অভিযুক্ত এবং ১ জনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হত্যা করা হয়।
এমএসএফ-এর আগস্ট মাসের রিপোর্টে দেখা যায়, ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ৪৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে ১১ জন শিশু ও ১৭ জন কিশোরী। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ২৪টি, যৌন হয়রানি ২১টি এবং শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি।
আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৯ জন। নিহত হয়েছেন দুজন এবং আহত ৫৪৭ জন। সহিংসতার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এমএসএফের তথ্যমতে, এসব ঘটনায় ২৩টি বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব, ৫টি বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষ, ২টি এনসিপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্ব, ১টি বিএনপি-এনসিপি সংঘর্ষ, ২টি বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সংঘর্ষ অন্তর্ভুক্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, দেশে এক ধরনের অপরাধচক্র তৈরি হয়েছে যারা অপরাধকে আয়-উপার্জনের উৎস বানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হলেও অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন