কয়েক দফা বৈঠকের পর জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি, বাস্তবায়নসহ এর ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আটটি দল একমত হয়েছিল। এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ চার দফা দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছিল জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আটটি রাজনৈতিক দল। এই সিদ্ধান্তের পর তিন-চার দিন না গড়াতেই জামায়াতে ইসলামী-এনসিপির মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েন বা দূরত্বও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানা গেল, এনসিপির অভ্যন্তরে আপত্তি ওঠায় এখনই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছে না দলটি। জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং নির্বাচনের আগে সনদের বাস্তবায়ন চাইলেও এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে থাকবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনীতির মাঠ বুঝে আপাতত কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে এনসিপি। আপাত দৃষ্টিতে যেটিকে দূরত্ব বা টানাপোড়েন মনে হলেও ভোটের সময় ঘনিয়ে আসলে এনসিপির সেই অবস্থানেও পরিবর্তন আসতে পারে।
সোমবার ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ চারটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সেখানে ছিল না এনসিপি। গত কয়েক মাস ধরে জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য দেখা গেলেও হঠাৎ জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে কেন এই টানাপোড়েন তৈরি হলো সেই প্রশ্নও সামনে আসছে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা ও দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাচন সংস্কারসহ বেশকিছু ইস্যুতে বর্তমানে এনসিপির মধ্যে দুটি স্পষ্ট ধারা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, সংস্কার নিয়ে জামায়াতের কিছু দাবির সাথে এনসিপির মত পার্থক্য থাকায় দলটির সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে এনসিপিতে আপত্তিও রয়েছে। এ কারণেই তারা জামায়াতের সাথে যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে না।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংস্কারের সব দাবিতে একমত না হওয়া ও নির্বাচনি জোট হওয়া নিয়ে নানা অস্পষ্টতা থাকায় আপাতত জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধতা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এনসিপি।
এনসিপি বলছে, যুগপৎ আন্দোলনের যেসব দাবিগুলো রয়েছে সেগুলোর সবটির সাথে একমত না থাকায় আপাতত জামায়াতের সাথে আন্দোলনে নামছে না তারা।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন খেলাফত মজলিসসহ কিছু দল উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুই কক্ষেই পিআর পদ্ধতি চায়। কিন্তু আমাদের দাবি শুধু উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে। যুগপৎ আন্দোলনে না যাওয়া এটি অন্যতম একটি কারণ’।
অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় এনসিপিতে আপত্তি রয়েছে। দলটির সূত্র জানায়, জুলাই সনদ প্রশ্নে একমত হলেও দলটির নেতাদের একাংশ ধর্মভিত্তিক কোনো দলের সঙ্গে জোটে যেতে রাজি নন।
এ অবস্থায় রাজনীতির মাঠে প্রশ্ন উঠেছে যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোটের আগে বিএনপিবিরোধী একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গড়ে তোলার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত ও ইসলামী- সেই জোটে কী থাকবে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল এনসিপি?
এনসিপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে এইবারই ক্ষমতায় যাওয়া যেত তাহলে আমরা সেটা করতাম। জামায়াতের সাথে ভোট করে যদি বিরোধী দলই হই, তখন দীর্ঘমেয়াদে আমরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এটা হলো আমাদের পলিসির জায়গা’।
গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি যখন যাত্রা শুরু করে সেখানে যেমন ইসলামপন্থি বলয়ের ব্যক্তিরাও যুক্ত হয়েছিল। তেমনি যুক্ত হয়েছিল বাম ঘরানার তরুণদের অনেকেই। যে কারণে দলের বাম বলয়ের অংশটির জামায়াতের সাথে জোট গঠনের আপত্তিও রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, ‘এনসিপি একটা নতুন দল। এখানে অনেক ব্লক থেকে তরুণরা এসেছে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। মতাদর্শগত জায়গা থেকে অনেকে হয়তো চাইছে না এখনই কোনো জোটের সঙ্গে একাত্ম হোক। সেখান থেকে হতে পারে এটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কিংবা কৌশল’।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন