ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অবিলম্বে কার্যকর স্বাধীন তথ্য কমিশন গঠন চায় টিআইবি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর লোগো। ছবি- সংগৃহীত

ক্ষমতা পালাবদলের এক বছরের বেশি সময়ের পরও নতুন করে তথ্য কমিশন গঠন না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

পাশাপাশি অনতিবিলম্বে স্বচ্ছপ্রক্রিয়ায় যোগ্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তথ্য কমিশনের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা অবসানের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

একইসঙ্গে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং তথ্য কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজানোসহ কার্যকর স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রসংস্কারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও, তথ্য কমিশন কার্যকর করা ও তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। নাগরিক সমাজ এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদানসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুপারিশ প্রদান করার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষার প্রতি সরকারের এই দৃশ্যমান উদাসীনতা দুর্ভাগ্যজনক- যা এই সরকারের অন্যতম একটি ব্যর্থতা। সরকারের এ ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে কমিশন গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জনগণ তথ্য চেয়ে আবেদন করলেও কমিশন না থাকায় এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর শুনানি হচ্ছে না- সমাধানও মিলছে না। তথ্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ তথ্য অধিকার-বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমে মন্থর গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা জনগণের তথ্যে অবাধ অভিগম্যতায় বাধা সৃষ্টি করছে। স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত না হওয়ায় সরকারি দপ্তরগুলোতে তথ্য গোপনের প্রবণতা ও স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ না করার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন পাশ ও সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে তথ্য কমিশনের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও কর্তৃত্ববাদী সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও দৃশ্যমান অনীহার ফলে আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন ঘটেনি। একদিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগের অভাব, অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে তথ্য কমিশনার হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের একাংশ দলীয় আদর্শের ধ্বজাবাহক হওয়ায় কমিশনও কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আইনটির মাধ্যমে সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়নি।’

টিআইবি সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পনের দফা সুপারিশমালা প্রস্তাব করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সরকারের নিকট ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত অংশীজনদের মতমতের ভিত্তিতে তথ্য অধিকার আইনটি প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধারার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে যুগোপোযোগী করা; রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অধিকার আইনের আওতাভুক্ত করা; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন খাতয়ারি খরচ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে  এবং নির্বাচন কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে সেসব তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে যথাসময়ে প্রকাশ করবে; বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং এক্ষেত্রে সকল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে; একাধিক নিবর্তনমূলক আইনের অপব্যবহার করে জনগণের ওপর যেসব নজরদারি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা বিলুপ্ত করা এবং তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।