শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৮:৫৪ পিএম

আগামী ৫ বছরে জাপানে এক লাখ কর্মী পাঠাবে সরকার

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৮:৫৪ পিএম

বাংলাদেশ ও জাপানের পতাকা। ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও জাপানের পতাকা। ছবি - সংগৃহীত

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে জাপান। ক্রমাগত বয়স্ক জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির কারণে ‘বুড়োদের দেশ’ খ্যাত এই উন্নত রাষ্ট্রটিতে তৈরি হয়েছে শ্রমিক সংকট। এই সংকট মোকাবিলায় বিদেশি শ্রমিক আমদানির পথে হাঁটছে জাপান সরকার। এতে করে বাংলাদেশের জন্যও তৈরি হয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র- জাপানের শ্রমবাজার।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। এরই মধ্যে জাপানের সঙ্গে দুইটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে পাঠানো হবে ২ হাজার, ২০২৭ সালে ৬ হাজার, ২০২৮ সালে ১২ হাজার, ২০২৯ সালে ৩০ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৫০ হাজার কর্মী।

এই কর্মীদের মধ্যে নির্মাণ খাতে ৪০ হাজার, কলকারখানায় ২০ হাজার, বয়স্কদের সেবাদানে কেয়ারগিভার হিসেবে ২০ হাজার এবং কৃষি ও গাড়ি সার্ভিসিং খাতে আরও ২০ হাজার কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাপানে কর্মসংস্থানের জন্য মূলত দুই ধরনের ভিসা রয়েছে- স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার (SSW) এবং টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (TITP)। এর মধ্যে SSW ভিসায় যাওয়া তুলনামূলক সহজ। এই ভিসা পেতে হলে বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে এবং পাস করতে হবে জাপান ফাউন্ডেশন টেস্ট (JFT) লেভেল A2। পাশাপাশি নির্ধারিত খাতে দক্ষতার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াও বাধ্যতামূলক।

ভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানিজ ভাষা শিক্ষা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ জাপানে যাওয়ার পথকে আরও সহজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এত সম্ভাবনার পরও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ১৯৯৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২ হাজার ৭৪০ জন কর্মী জাপানে গেছেন, যা দেশের মোট শ্রমশক্তি রপ্তানির মাত্র ০.০২ শতাংশ। এর বিপরীতে, নেপাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ৬০ হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী পাঠিয়েছে, যারা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো দেশ চাইলে বছরে এক লাখ দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ঘাটতি।

বিএমইটির আওতায় বর্তমানে জাপানিজ ভাষা (N5 ও N4) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৩৩টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, নরসিংদী, টাঙ্গাইল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু এসব কেন্দ্রে দক্ষ জাপানি ভাষা শিক্ষকের অভাব প্রকট, ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষা পাচ্ছেন না।

জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশি সৈয়দ আজম বলেন, ‘জাপানে অভিবাসনের আগ্রহ বাড়লেও প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাষা ও দক্ষতার ঘাটতি। অনেকেই দেশে থেকেই জাপানি ভাষা না শিখে আসায় চাকরি ও দৈনন্দিন জীবনে সমস্যায় পড়ছেন। এ ছাড়া তথ্যের অভাব ও মিথ্যা আশ্বাসে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাওয়াই গ্রুপ জাপান লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার বিরুলিয়ায় ২২ বিঘা জমির ওপর একটি আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। ১ অক্টোবর থেকে এখানে জাপানি শিক্ষকদের মাধ্যমে ভাষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে ৮০ জন কর্মী জাপানে পাঠিয়েছে এবং আগামী ৬ মাসে আরও ৬০০ জন কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠন করেছে ‘জাপান সেল’। এই সেল জাপানে কর্মসংস্থানের চাহিদা নিরূপণ, নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ভাষা প্রশিক্ষণ, স্কিল টেস্ট এবং তথ্য সংগ্রহসহ নানা কাজ করছে।

জাপান সেলের প্রধান এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘ভাষা ও স্কিল টেস্ট পাস করতে পারলে এক বছরেই এক লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের হাতে এখনো সেই পরিমাণ প্রস্তুত কর্মী নেই। আমরা দ্রুত সেই ঘাটতি পূরণে কাজ করছি।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের শ্রমবাজারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে বাংলাদেশকে নিতে হবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ, জাপানি ভাষা শিক্ষা বিস্তৃত করা এবং দেশীয় সংস্কৃতি ও বাস্তবতা মাথায় রেখে কর্মী গড়ে তোলা জরুরি।

Link copied!