ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করছে: এইচআরডব্লিউ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৫:২২ পিএম
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বলেছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীর সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এই আইনে ক্রমবর্ধমানভাবে গ্রেপ্তার করছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) প্রকাশিত বিবৃতিতে এই অভিযোগ জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়কে অবিলম্বে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানাতে হবে এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বেআইনি রাজনৈতিক সহিংসতার দায়ে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে উৎসাহিত করতে হবে।

তিন সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের পর ২০২৪ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ সময় অন্তত এক হাজার ৪০০ জন নিহত হন। ২০২৫ সালের ১২ মে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের কঠোর ধারা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের ওপর ‘অস্থায়ী’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় দলীয় নেতাকর্মীদের সভা-সমাবেশ, প্রকাশনা ও অনলাইন বক্তব্য দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সদস্য ও ‘শান্তিপূর্ণ কর্মীদের’ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এইচআরডব্লিউর

সংস্থাটির এশিয়াবিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশিরা যেভাবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের শিকার হয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সেই একই পথে হাঁটা উচিত নয়। সেটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে ভরাট করাই হোক বা ভিন্নমত দমন করাই হোক। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসকে সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তাই তাদের উচিত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার রোধে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা।’

এইচআরডব্লিউ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আবার অনেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আটক হয়েছেন। হেফাজতে থাকা বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা শেখ হাসিনা সরকারের সময়কার মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তির মতো বলে মনে হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা দমন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ সতর্ক করে বলেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এই সংশোধন ‘মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করবে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলবে’। তবে মুহাম্মদ ইউনূস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিস ও বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষায় সহায়তার জন্য তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এই মিশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতির এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।’

ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার করেছে।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের এখনই উচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা, যা কার্যত রাজনৈতিক দমননীতিতে পরিণত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দমন নয়, বরং একটি নিরাপদ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করা।’