ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করছে চট্টগ্রাম বন্দর

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি- সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিক লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ডেনমার্ক ভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বি.ভির সঙ্গে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

বুধবার (১২ নভেম্বর) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে এই চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চুক্তি অনুসারে, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। এপিএম টার্মিনালস বি.ভি. টার্মিনালটির ডিজাইন, নির্মাণ, অর্থায়ন এবং পরিচালনা করবে, কিন্তু মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে। এতে সরকারের মূলধনী ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং দেশের বন্দর খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘এপিএম টার্মিনালস বিশ্বের ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। এর মধ্যে শীর্ষ ২০টি বন্দরের ১০টির অপারেটর তারা। ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দর খাতে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন হবে।’

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল দেশের প্রথম সবুজ ও স্মার্ট বন্দর হিসেবে তৈরি হবে। এটি দ্বিগুণ সক্ষমতার জাহাজ গ্রহণ করতে পারবে এবং ২৪ ঘণ্টা নেভিগেশন সুবিধা নিশ্চিত করবে। সরাসরি বৈশ্বিক শিপিং নেটওয়ার্কের সংযোগের কারণে রপ্তানি ও আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

চুক্তি অনুযায়ী, এপিএম টার্মিনালস পুরো ৩০ বছরের মেয়াদকালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে। এলসিটি চালুর পর বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বর্তমানের তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যা সরকারের আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০–৭০০ জনের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা খাতেও কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে। 

এ ছাড়া, এপিএম টার্মিনালস আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও পরিবেশ (এইচএসএসই) নীতি অনুসরণ করবে। ডিজিটাল টার্মিনাল পরিচালনা ব্যবস্থা, লিন পদ্ধতি ও ফ্লো প্রসেস ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে স্থানীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।

লালদিয়া টার্মিনালের কার্যক্রমের ফলে দ্রুত জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড সময় ও কম কনটেইনার ডওয়েল টাইম নিশ্চিত হবে। এতে বিশেষ করে পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানিকারকরা সময়মতো সরবরাহ দিতে সক্ষম হবেন। 

এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবাহ, নতুন ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, কোল্ড চেইন ও শিল্পাঞ্চলের প্রসার বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি দক্ষ প্রযুক্তি ও জলবায়ু অভিযোজন উদ্যোগের মাধ্যমে কার্বন নির্গমন হ্রাস পাবে এবং বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তি (জাতীয় নির্ধারিত অবদান, এনডিসি) অর্জনে সহায়ক হবে।

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের বন্দর খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবে। এটি শুধু অবকাঠামো বিনিয়োগ নয়, দেশের লজিস্টিক খাতকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে এবং রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য নতুন যুগের সূচনা করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।’