ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

নীল ড্রামে ২৬ খণ্ড মরদেহ : ত্রিভুজ প্রেমের বলি ব্যবসায়ী আশরাফুল

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৭:৪৯ এএম
নীল ড্রামা খণ্ডিত লাশ ও নিহত আশরাফুল। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীতে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ খণ্ডে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি নীল ড্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় আশরাফুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জরেজুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে জরেজুল ও তার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত শামীমা আক্তারকে।

ত্রিভুজ প্রেমর জটিলতা

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতা।

পুলিশ জানায়, বিবাহিত নারী শামীমা আক্তারের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান আশরাফুল ও মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুল। এই প্রেমের টানাপোড়েন থেকেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরে, যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় খুনে।

ডিবি সূত্র বলছে, বালিশ চাপা ও হাতুড়ির আঘাতে আশরাফুলকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর দুই দিন পরে মরদেহ ২৬ খণ্ডে কেটে দুটি ড্রামে ভরা হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন জরেজুল ও শামীমা দুজনই।

গ্রেপ্তার জরেজুল ও শামীমা

শুক্রবার (১৪ মে) রাতে কুমিল্লা থেকে জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। অন্যদিকে র‍্যাব-৩ লাকসাম থেকে গ্রেপ্তার করে শামীমাকে।

ডিবির তথ্যমতে, শামীমা কুমিল্লার বাসিন্দা। তার স্বামী সৌদি আরবে থাকেন, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিন বছর আগে ফেসবুকে জরেজুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, যা পরে ঘনিষ্ঠতায় গড়ায়।

যেভাবে ঘটেছিল খুন

রংপুরের একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় আশরাফুল ও জরেজুলের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠতা। জরেজুলের মাধ্যমেই শামীমার সঙ্গে পরিচয় হয় আশরাফুলের। পরে আশরাফুলের সঙ্গেও শামীমা আক্তারের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

ডিবি জানায়, জরেজুল ঢাকায় দক্ষিণ ধনিয়ায় বাসা ভাড়া নেন। শামীমা তার ছেলে-মেয়েকে কুমিল্লায় রেখে সে বাসায় ওঠেন। সেখানেই ঘটনার সূত্রপাত। আশরাফুলের সঙ্গে শামীমার শারীরিক সম্পর্ক হয়, যেটা জেরাজুল দেখে ফেলে। জেরাজুল ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান, যাওয়ার সময় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বাসায় এসে দেখেন আশরাফুল ও শামীমা একই বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। জেরাজুল ঘরের ভেতর লুকিয়ে থেকে রাতের অপেক্ষা করছিলেন। রাতে পুনরায় শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে বালিশ চাপা দিয়ে আশরাফুলকে ধরে ফেলেন। শামীমাও তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে মাথায় হাতুড়ি মেরে আশরাফুলকে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর মরদেহ দুই দিন বাসায় রাখা হয়। পরে ২৬ খণ্ডে কেটে ড্রামে ভরে ঈদগাহের সামনে ফেলে রেখে দুজনই কুমিল্লায় পালিয়ে যান।

মরদেহ শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট

স্থানীয়দের খবর পেয়ে পুলিশ ড্রাম থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে সিআইডি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলালে আশরাফুলের পরিচয় শনাক্ত হয়। এরপরই ডিবি তদন্ত শুরু করে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ত্রিভুজ পরকীয়া থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

২৬ খণ্ড মরদেহ, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. দীপিকা রায় ময়নাতদন্ত করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গলা থেকে নিচে ২৫টি অংশ এবং মাথা মিলিয়ে ২৬ খণ্ড মরদেহ পাওয়া যায়। গলার নিচের অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।

পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ

ঘটনার পরদিন আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এজাহারে তিনি জানান, ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজুলের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকেই তাঁর ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ড্রামে মরদেহ উদ্ধারের খবর দেখে তারা হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।

আশরাফুলের স্ত্রী লাকী বেগম জানান, বিদেশ যাওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা ধার চাইতে জরেজুল তাঁর স্বামীকে চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে এসে খুন করেছে। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।